স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
কোচিংয়ের প্রশ্নপত্রে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক খণ্ডকালীন শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক শেখ মো. বেল্লাল হোসেনকে বরখাস্তের পাশাপশি তাঁর বিরুদ্ধে বাগেরহাট মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) গভীর রাতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল মতিন হাওলাদার বাদী হয়ে চাকরিচ্যুত শিক্ষক বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। তবে পুলিশ ওই শিক্ষককে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
গত ৯ ডিসেম্বর বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় খণ্ডকালীন শিক্ষক বেল্লাল হোসেনের কোচিংয়ের চুড়ান্ত মডেল টেস্টের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনা তদন্তে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষক বেল্লাল হোসেনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বলে প্রতিবেদন দেয় এবং তাঁকে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ করে।
বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের কাছে জমা দেওয়া হয়। তিনি নিয়ম মেনে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে বেল্লাল হোসেনের মোবাইল ফোনে চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে দেওয়া লিখিত বক্তব্য তিনি দাবি করেন, ‘আমি গত ৩০ জুলাই ২০১৬ইং তারিখ হতে চাকরীতে যোগদান করি। বিভিন্ন সময়ে স্কুলের পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন করি। সেই সকল প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে কিভাবে এই বার্ষিকী পরীক্ষার প্রশ্নের সাথে হুবহু মিলে যায় তা আমার বোধগম্য নয়। আমার সাথে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর জন্য কাজটি করা হচ্ছে।’
বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন হাওলাদার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তর মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে আইসিটি বিষয় চালু করে স্ব স্ব প্রধান শিক্ষককে ওই পদে নিয়োগের ক্ষমতা দেয়। অধিদপ্তরের দেওয়া ক্ষমতাবলে দেড় বছর আগে এই স্কুলের প্রভাতি ও দিবা শাখায় দুজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়’ পরীক্ষায় খণ্ডকালীন শিক্ষক বেল্লাল হোসেনের কোচিংয়ে অনুষ্ঠিত মডেল টেস্টের প্রশ্নপত্রে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার অভিযোগ উঠলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে তাঁকে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। টিচার্স কাউন্সিলের জরুরি সভায়ও একই দাবি ওঠে। তাই নিয়োগবিধি মেনে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাগেরহাট মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪ ধারায় শিক্ষক বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। আসামিকে ধরতে অভিযান চলছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক শেখ মো. বেল্লাল হোসেন প্রশ্নপত্র ফাঁস করে যে অপরাধ করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য। তাই তাঁকে শুধু চাকরিচ্যুত করলেই হবে না। ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক যেন এ ধরনের অপরাধ করার ধৃষ্টতা না দেখাতে পারেন, সে জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এজি//এসআই/বিআই/১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭
** অভিযুক্ত সেই শিক্ষককের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ
** কোচিংয়ের প্রশ্নপত্রে সরকারি স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা!