স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকণের লক্ষ্যে বাগেরহাটে শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রছাত্র ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা জীবিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) শহরের স্বাধীনতা উদ্যানে আয়োজিত এ সভায় বক্তারা শিক্ষা ক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমানোর আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসন আয়োজিত এ সভায় মাধ্যমিক পর্যায়ে বাগেরহাটের সকল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য এবং শিক্ষার্থী-অভিবাববৃন্দ অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় চলাকালে শিক্ষকদের টিউশনি-কোচিং না করানোর শপথ করান জেলা প্রশাসক।
মত বিনিময়ে শিক্ষার মান ও বাণিজ্যিকরণের বিষয় নিয়ে উদ্বেগ জাননা অভিভাবকরা। সেই সাথে শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ এবং এই খাতে অনিয়োম বন্ধে জেলা প্রশাসনের অধিনে একটি শক্তিশালী ট্রাসফোর্স গঠন করে কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দবি জানান তারা।
বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যপক শেখ বুলবুল কবির বলেন, এখন বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে পাঠদান চলাকালে গিয়েও ব্লাক বোর্ডে ক্লাসের বিষয়, শ্রেণিসহ ইত্যাদি বিষয়ে কিছু লেখা পাওয়া যায় না। আমাদের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সমস্যা রয়ে গেছে। যার জন্য আজকের শিক্ষার এই দূরঅবস্থা।
শিক্ষক-অভিভাবদের বক্তব্যে শিক্ষা খাদের নানা দুর্নীতির কথা উঠে আসে বারবার।
বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি আহাদ হায়দার বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন সহশিক্ষা কার্যক্রম নেই বললেই চলে। বলা হয় শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড, কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড আজ কি অবস্থায় আছে তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। সরকার নোট-গাইড বই বন্ধের জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করছে। আমাদের শিক্ষরা যদি ছাত্রদের এগুলো কিনতে না বলেন তবে এমনিতেই নোট বই বন্ধ হয়ে যাবে।
নামে বেনামে আমাদের শিক্ষরা কোচিং ব্যবসা করছে। এতে জিপিএ-৫ হয়তো বাড়ছে। তবে সামগ্রীক শিক্ষার মান কমছে। তা বোঝা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পরীক্ষায়।
সভায় বাগেরহাট সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শেখ ফাহিম হোসেন বলেন, বর্তমানে আমাদের ক্লাসে ১৭টি বই। এর মধ্যে শারীরিক শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। এর সবাই আমাদের জানা প্রয়োজন। তবে প্রতিটি বিষয় আলাদা আলাদ ভাগ না করে যদি আমাদের বইয়ের লোড (চাপ) কমানো হতো তবে ভালো হতো।
বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসম্মত ও গুনগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের আরও আন্তরিক হয়ে পাঠদান করাতে হবে। সকল শ্রেণীতে গাইড বই বর্জন ও কোচিং বানিজ্য এখন থেকেই বন্ধ করুন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিশুদের শিক্ষাদান করুন। তাহলে আগামী দিনের ভবিষ্যত এসব শিশুরা দেশগড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর হবে। এসব শিশুরা আপনাদের অবদানের কথা তারা সারাজীবন স্মরণ রাখবে। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। তাই ভাল শিক্ষকের মর্যাদা পেতে শিক্ষকদের শিশু বান্ধব হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ানোর প্রবণতা আছে। তারা কিভাবে এই শিশু শিক্ষার্থীদের তাদের ব্যাচে নিয়ে পড়াবেন তা নিয়েই তারা বেশি ব্যস্ত থাকেন। এছাড়া স্কুলগুলোতে কোমলমতি শিশুদের নির্দিষ্ট কিছু প্রকাশনীর গাইড কিনে পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যা নৈতিকতা বিরোধী। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি এসব শিশুদের নিয়মিত ক্লাস নেন তাহলে তাদের আর প্রাইভেট পড়তে হয়না। শিশুদের মান সম্মত শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্য থেকে সরে আসার আহ্বান জানান ওই অভিভাবকরা।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাগেরহাট পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মামুন-উল-হাসান, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, শিক্ষাবিদ মোজাফফর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শাহিন হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল হাফিজ, ডা. প্রদীপ কুমার বকসিসহ শিক্ষক নেতা ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, আমাদের এই আয়োজন করতে হয়েছে হতাশা, উৎবেগ, উৎকন্ঠা থেকে। আপনারা যানেন শিক্ষাক্ষেত্রে কি পরিমানের নৈরাজ্যকার অবস্থা। যারা কোচিং বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের সবার তথ্য আমাদের কাছে আছে।
আমি বিশ্বাস করি আন্তরিকতা ও ভালোবসার সম্পর্কের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে। তাই আপনাদের প্রতি কোন প্রকার আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইছিনা। সরকার চাইছে মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষার প্রসার। যেন আপনাদের কারো প্রতি আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না হয়।
এইচ//এসআই/বিআই/২৫ আগস্ট, ২০১৭