স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই সুন্দরবনে দস্যুতা করতে দেওয়া হবে না। দস্যুতা ছেড়ে যাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন, তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে সরকার। তবে যারা এখনও দস্যুতা করছে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরে না আসলে তাদের পরিনতি হবে ভয়াবহ।
সুন্দরবনের দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ব্যক্তিদের আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে বাগেরহাট শহরের হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গত এক বছরে আত্মসমর্পন করা ১২টি বনদস্যু বাহিনীর ১৩২ জন সদস্যের প্রত্যেককে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এক লাখ টাকার চেক, একটি মুঠোফোন, ঈদ উপহারসামগ্রী ও বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সুন্দরবনে দস্যুতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এখনো যাঁরা দস্যুবৃত্তিতে আছেন, তাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন; সরকার আপনাদের সহযোগিতা করবে।’
তিনি বলেন, অপার সম্ভবনার দেশ বাংলাদেশ। সুন্দরবন শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এটা হতে পারে আধুনিক পর্যটনের স্থান। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান করতে সুন্দরবনকে জলদস্যু ও বনদস্যু মুক্ত করতে যাচ্ছি।
আমরা সুন্দরবনকে একটি নিরাপত্তার চাদরে আবৃত্ত করব। সেজন্য আমাদের বাহিনীগুলোকে আরও শক্তিশালী করছি। সবমিলিয়ে সুন্দরবনকে একটা নিছিদ্র নিরাপত্তার চাঁদরে আবৃত্ত করা হবে।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুন্শি এমপি, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশা ও সংরক্ষিত নারী সাংসদ হ্যাপি বড়াল, স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আনসার ও সীমান্ত) জ্যোতির্ময় দত্ত, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
২০১৬ সালের ৩১ মে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সুন্দরবনের বনদস্যু ‘মাস্টার বাহিনী’ প্রধান ও তার নয়সহযোগীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে বনদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা শুরু হয়। এরপর ১৩ জুলাই বনদস্যু মজনু এবং ইলিয়াস বাহিনীর সদস্যরাও আত্মসমর্পণ করেন।
এই ধারাবাহিকতায় গত প্রায় এক বছরে ১২টি বনদস্যু বাহিনীর ১৩২ জন সদস্য দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এসময় তারা বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদও জমা দেন।
র্যাবের মাহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, একব্যক্তি জলদস্যু হয় বিভিন্ন সামাজিক কারনে। আমরা সেই সামাজিক কারণ বিশ্লেষন করেছি। উপকূল ও সুন্দরবনে আমরা রক্ষা করবই। এই লক্ষ্যে র্যাবের তৎপরতায় আজ দস্যুরা আত্মসমর্পন করেছে। সুন্দরবনকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যে আমরা আত্মসমর্পনকৃত, নিহত ও আটক মিলিয়ে ৬‘শ দস্যুকে সুন্দরবন থেকে উঠিয়ে এনেছি। এইসাথে দেড় হাজার অস্ত্র, ৪০ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ থেকে মুক্ত হয়েছে সুন্দরবন।
তিনি বলেন, এখনও দুই একটি গোষ্ঠি মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিতে চায়। আমরা সুন্দরবনে একায় কোন জলদস্যু গোষ্ঠিকে থাকতে দেব না।
যারা সুন্দরবনে দস্যুতা করছে তাদের হুশিয়ার করে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, আপনারা যদি সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসেন। আপনাদের সহযোগিতা করব। যদি ফিরে না আসেন আপনাদের পরিনতি হবে ভয়াবহ।
এজি//এসআই/বিআই/২৩ আগস্ট, ২০১৭