• মেহেদী হাসান সোহেল
বর্ষা এলেই পানিবন্দি অবস্থার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলের প্রতিবাদ মুখর সরব উপস্থিতি; বাদ যায় না মূলধারার সংবাদ মাধ্যমও। কিন্তু বর্ষা গেলে ভৈরব তথা সকল নদ-নদী ও জলাধার দখলের প্রতিযোগীতা উৎসবের রূপ নেয়।
পানিবন্দি অবস্থা নিয়ে সবার মত আমিও উদ্বিগ্ন এবং সরকার তথা মেয়রের উপর বিরক্ত। কিন্তু যেদিন আমাদের চোখের সামনে উত্তরার জলাশয় ভরাট করে রাস্তা আর প্লট তৈরি করল তখন আমরা সরকারকে বাহাবা দিয়েছি। এখন বাহাবা দিচ্ছি পূর্বাচল আর ডিয়াবাড়ির জন্য কিন্তু একবারও পরিনাম ভাবিনী।
অন্যদেশের জলাবদ্ধতার জন্য সেইদেশের জনগণ এতটা দায়ী না, তবু তারা দেশকে বাজে ভাবে কোথাও প্রেজেন্ট করে না। তাই আমার অনুরোধ প্রতিবাদ চলবে তবে আমার দেশকে হেয় প্রতিপন্ন করে নয়। কারণ এদেশের এই অবস্থার জন্য আমরাও কম দায়ী না।
আমার জন্ম সমুদ্রপাড়ের মফস্বল শহর বাগেরহাটে। যেখানে কোনদিন জলাবদ্ধতা দেখিনি। পানি উঠলেও এক ঘন্টা পরে নাই। ভাটির টানে পানি উধাও। সেই শহরের মানুষ এখন পানিবন্দি থাকে দিনের পর দিন।
আমাদের শহর পুকুর-দীঘির শহর নামে পরিচিত ছিল। চোখের সামনে একের পর পুকুর ভরাট হচ্ছে, সবাই নির্বিকার। মিঠাপুকুরের পাশের পুকুর ভরাট হয়ে হয়েছে। ভরাট হয়েছে শহরের অধিকাংশ জলাশয়। বাগেরহাটবাসী আনন্দে উদ্বেলিত, ভাবেনি এই ভয়াবহ পরিনামের কথা।
বাগেরহাটে আমাদের বাসার সামনে ছিল কুড়িহাত প্রসস্থ খাল। তা ভরাট করে তৈরি হয়েছে দু’হাত প্রস্থ ড্রেন। আমাদের পাড়াবাসীর খুশী দেখেকে, কারণ আঠ হাত ফাও যায়গা পেয়ে গেলাম। আর পিসি কলেজের খালের সাথে বাগেরহাটবাসী পরিচিত। আমি এই খালে ছোট বেলায় মাছ ধরেছি। জোয়ার ভাটা হত, এখন জোয়ার ভাটাতো দূরের কথা! খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
যেদিন খাল বন্ধ করা হল কেউ প্রতিবাদ করিনি। বরং আমরাই আবার বলি অমুক সাহেব সফল, তমুক সাহেব সফল, তাহলে এতো সফলতা তো শহর পানির নিচে কেন? অবশ্যই এই পানিবন্দি অবস্থার জন্য সরকার দায়ী কিন্তু বিবেককে প্রশ্ন করে দেখুন আপনি-আমিও কি এর জন্য দায়ী না? আর দায় এড়ানো নির্লজ্জতার শামিল। এদেশের মালিক জনগণ, সরকার নয়। মালিক যদি তা সম্পত্তি রক্ষা করতে না জানে কর্মচারীর কাছে ভাল কিছু আশা করা যায় না।
আসুন আমারা সবাই আমাদের প্রিয় শহর বাগেরহাট তথা বাংলাদেশকে বাঁচাতে জলাধার রক্ষা করি। নইলে খুব বেশী দূরে নয়, আমরা পানির তলে হারিয়ে যাব।
লেখক: বেসরকরি চাকুরিজীবী।
E-mail: mehdee19@gmail.com