অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না শিশুটির
অলীপ ঘটক ও ইনজামামুল হক | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
অজানা রোগে আক্রান্ত শিশু আলিমুন শেখ। টিউমার আকৃতির একাধিক গোটা গোটা মাংসপিণ্ডে মাথার পেছনটা অস্বাভাবিক আকার ধারণ করেছে তার। অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না শিশুটির।
আলিমুনের বয়স ৯ বছর। তার বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের সোনাকান্দার গ্রামে। আলিমুনের বাবা আজাহার শেখ, মারা গেছে ৩ বছর হলো। মা সখিনা বেগম দিনমজুরের কাজ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যত্র বিয়ে হয়েছে তার।
আলিমুন এখন থাকে তার বড় চাচা শাহজাহান শেখের সংসারে। সোনাকান্দার গ্রামে এক শতক জমির উপর ছোট্ট একটি ঘর শাহজাহান শেখের। সেখানে বড় চাচার পরিবার ছাড়াও দাদি কুলসুম বেগম আর বড় ভাই শুকুর আলী শেখ এক সঙ্গে থাকেন।
রোববার (১৬ জুলাই) দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, টিন দিয়ে ছাওয়া এক রুমের একটি ছোট্ট ঘরের দরজার সামনে বসে আছে আলিমুন। মেঝেটা মাটির, চারপাশটা ঘেরা হোগলা পাতায়। মাথাটা ফোলা; গোটা গোটা টিউমারের মতো। হঠাৎ করে দেখলে আতকে উঠবেন যে কেউ।
খালি গায়ে বসে থাকা আলিমুনের পিঠে ও হাঁটুতেও এখন উঠতে শুরু করেছে টিউমারের মতো গোটা। শিশুটির শরীরে কী রোগ তা শনাক্ত হয়নি। বলেতে পারেনা কেউ।
আলিমুনের বড় চাচি শরিফা বেগম বলেন, ‘ওর বয়স যখন তিন সাড়ে তিন বছর তখন মাথার পেছনে ছোট ছোট টিউমারের মতো ওঠে। তখন ওর বাবা বেঁচে ছিলেন। সেই সময়ে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার নেওয়া হয়েছিল। ধারদেনা করে কিছু দিন ওষুধ খাওয়ানো হয়।’
খুলনার চিকিৎসকরা আলিমুনকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনে তা আর সম্ভব হয়নি। বাবা মারা যাওয়ার পর ওর মা রাস্তার কাজ করে। তারও আবার বিয়ে হয়েছে। তাই আলিমুন এখন আমাদের কাছে থাকে। মাঝে মাঝে ওর মাও এখানে এসে ওর সাথে থাকে।
শিশুটির মা সখিনা বেগম বলেন, ‘মাথার পেছনে টিউমারগুলো শুধু বড় হচ্ছে। ফোড়ার মতো দুটি ঠেটে গিয়েছে, মাঝে মাঝে তা দিয়ে রক্ত বের হয়। মাঝে মাঝে ব্যথার কথা বলে। রাতে শুতে (ঘুমাতে) গিয়ে কান্নাকাটি করে। আমাদের তো টাকা-পয়সা নেই; ওর চিকিৎসকা করাবো কি করে?’
আলিমুনের ছবি দিয়ে তার অসুস্থতা ও অসহায়ত্বের বিষয়টি সাম্প্রতি ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেন গজালিয়া বাজারের ওষুধ বিক্রেতা ও শৈল্য চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম। বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, আমি সকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত সোনাকান্দার শেখ বাড়ি জামে মসজিদে পড়াই। সেই সূত্র ধরে আমি শিশুটি সম্পর্কে জনতে পারি।
‘তিন বছর হলো সে এখানে পড়ছে। এখন তার দ্বিতীয় শ্রেণীতে থাকার কথা। ওর মাথার পেছনটা দেখতে বড্ড অস্বাভাবিক। পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে শিশুটির চিকিৎসা হচ্ছে না। আমি চেয়েছিলাম সাংবাদিকদের মাধ্যমে আলিমুনের অসুস্থতার খবর যেন সবাই জানতে পারে এবং ওর চিকিৎসার জন্য সবাই এগিয়ে আসে।- এজন্যই ফেসবুকে ওর ছবি দিয়েছিলাম।’ বলেন জাহিদুল।
আলিমুলের প্রতিবেশি ও গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর সালাম শেখ বলেন, আলিমুনের বাবা নেই। চাচার কাছে তাকে। তারাও খুব দরিদ্র; ঠিক মতো তিন বেলা খেতে পারেনা। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই।
গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মো. নাসির বলেন, অসুস্থতার কারণে বাচ্চাটা বেশি বের হতোনা। আমরাও ওর সম্পর্কে জনতাম না। জাহিদুল ইসলামের মাধ্যমে শিশুটির ছবি ফেসবুকে ছড়ালে আমিও তার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছে। চিকিৎসার জন্য ওকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন অরুণ চন্দ্র মণ্ডল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সোস্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যম কর্মীতের মাধ্যমে শিশুটির বিষয়ে প্রথম জানতে পারি। এর পর তাকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়েছে।
রাতে শিশুটিকে দেখতে হাসপাতালে যান তিনি। এর পর তিনি বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া এই মুহুর্তে রোগ সম্পর্কে বলা যাবে না। আমরা ওর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনিয় উদ্যোগ নিচ্ছি। বিকালে এখানে ভর্তির পর থেকে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। দরকার হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন সিভিল সার্জন।
এইচ//এসআই/বিআই/১৬ জুলাই, ২০১৭