• শেখ মুশফিকুর রহমান
পরিবারের ঠিক কতজন সদস্যের সাথে আপনার চিন্তার হুবহু মিল আছে? কিংবা ধরেন রুচিতে অথবা আবেগ/অনুভূতি প্রকাশের ধরনে?
কি পাইলেন একজনকেও, যে আপনার কার্বণ কপি?… অসুবিধা নাই, এতো ভাবতে হবে না। পাবেন না, এই বৈচিত্র্যকে মেনে নিয়েই তো সুখে আছেন। ভাই বোনের জন্য, মা সন্তানের জন্য কি অপরিসীম দরদ নিয়ে অপেক্ষা করেন না আবার কবে একসাথে মিলিত হবেন? খুনসুটি করবেন, রাগ, অভিমান, দুরত্ব তৈরি হবে আবার আদর সোহাগের ডিব্বা সাথে নিয়ে হাজির হবেন যদি আরেকটু সময় একসাথে থাকতে পারতাম!
টানাপোড়েন সে তো আছেই, যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন থাকবে, একদিকে না একদিকে টানাটানি চলতেই থাকবে। কি করবেন আপনি, পরিবার ত্যাগ করবেন?
কোথায় যাবেন, বন্ধুদের কাছে? সেখানেও টান খাইলে? রাজনীতির কাছে? সেখানেও যদি কেউ ল্যাঙ মেরে ফেলে দেয়, তাহলে? ধর্মের কাছে? তা বেশ, ধর্ম আপনাকে আত্মপ্রশান্তি দিতে পারে যদি তা মানেন পুরোপুরি (সে যে ধর্মই হোক না কেনো)।
পারবেন তো? বুঝেশুনে বলছেন নাকি ধর্ম পালন করতে গিয়ে আরো বেশী ‘অধর্ম’ করে ফেলছেন বুঝেন কিন্তু। নাকি নাস্তিক হবেন? অস্তিত্বহীনতায় আস্থা রাখতে গিয়ে যদি সমাজ সংসার দায়িত্ব সবকিছুর উপর অনাস্থা তৈরী করে ফেলেন? ভাবেন, ভাবতে থাকেন।
আপনার নিজের ভেতরে যদি ভালবাসা’র বোধ (সে ভালবাসা সৃষ্টিকর্তা, মানুষ, জীব কিংবা যেকোনকিছুর প্রতিই হোক না কেনো) না থাকে আপনি অন্য কাউকে/ অন্য কিছুকে ভালবাসবেন কিভাবে? সবই তো আপনার শত্রু, ঠগ, বাটপার..ক্রমাগত বিভ্রান্ত হতে থাকবেন। পরিবার, বন্ধু, আদর্শ সবই ক্রমাগতভাবে শত্রু হতে থাকবে। কোথায় যাবেন, কোথায় লুকাবেন? নাকি নিজে পাইনি বলে ক্রমাগত আক্রমন করে করে সব ছিন্ন ভিন্ন করে দেবেন, আমার যা নেই অন্য কারো তা থাকবেনা। ভাবেন, ভাবতে থাকেন।
যদি ঈশ্বরবাদে বিশ্বাস করেন, দ্যাখেন কী অসীম মমতায় একটু একটু করে এক একটা ‘সৃষ্টি’ সৃষ্টি করেছেন মহান অধিপতি, সঞ্চালন করে চলেছেন ‘প্রাণ’ এর প্রবাহ এক প্রাণ থেকে অন্য প্রাণে। আর যদি নিরশ্বেরবাদেও বিশ্বাস করেন, দ্যাখেন প্রকৃতির কী অপরূপ লীলা, এত বর্ণালি বৈচিত্র্য কিন্তু কোথাও কোন ছন্দপতন নেই, নিজেই নিজের ধ্বংসকে মেরামত করে দিব্যি টিকে আছে। আর আমরা ‘মানুষ’! প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে চলেছি এই সৃষ্টি, আমাদের বোধ, বিবেক। যুদ্ধটা আসলে কার সাথে কার? কতোটা বোধহীন হলে তবে তুমি বলতে পারো তোমার সৃষ্টিকর্তাকে তুমি হেফাজত করবে?! আর কতোটা দায়হীন হলে তবে তুমি এতো এতো মানুষের ঈশ্বরভক্তিকে উপহাস করতে পারো?!
ভালবাসা যদি না’ই থাকে, দূরে থাকো বাপ। এটা মানুষের সমাজ, ভালবাসা দিয়েই এখানে প্রাণের সৃষ্টি। ‘ভালবাসা’ই মূল সূত্র। মতে মতে না মিললে তুমি একজন আরেকজনকে কতল করবে, কে দিয়েছে তোমাকে অধিকার? বের করো তোমার ধর্মগ্রন্থ, বের করো তোমার দার্শনিক কেতাব, বের করো তোমার সংবিধান। থাক, বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই, কোথাও পাবে না। তুমি যেটা করছো সেটা স্রেফ রাজনীতি- ক্ষমতার, আত্মম্ভরিতার। তোমার শুদ্ধবাদিতা চর্চার দাপটে আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। মানুষের সমাজে থাকতে হইলে আরেকটু মানবিক হও, নিজের সম্মান রাখতে হইলে অন্যকে সম্মান দাও। ভাইগো, আপাগো কথার লাগাম আরেকটু টানা যায় না?
জানি, তোমরা সবাই যুদ্ধের মধ্যে আছো, আদর্শিক যুদ্ধ। যেই জয়লাভ করোনা কেনো, সেই সমাজে মানুষ থাকতে পারবে তো?
এদিকে পাহাড়ে আগুন জ্বলছে দাউদাউ, জুলুমের রাজনীতি তছনছ করে ফেলছে মূল্যবোধ, ক্ষমতার দাম্ভিকতায় কলুষিত সব চেনা সম্পর্ক আর তুমি আমাকে বলো চুপ রাহো, গর্তে লুকাও! আমার কংকালসার দেহ আরো পচে গলে দুর্গন্ধ বের হলে তবেই তুমি আমাকে মুক্তির ঠিকানায় পৌছে দেবে?
আমি শুধু প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে চাই, ভালবাসার আবেশময় চারিধার পেতে চাই, বিশ্বাস করো আর কিচ্ছু চাই না। আমার সন্তানের চোখের দিকে তাকাতে কখনো যেনো লজ্জা না পাই, কী করেছো বাবা আমাদের জন্য? তুমিও কি গর্তে লুকিয়েছিলে? আমার প্রাণ থাকতে আমি আমার সন্তানের গর্তও কি খুড়ে রাখবো তবে!
কোথা গেলে মানুষ পাবো ভাই? যারা খুন করে তারা তো মানুষ না, যারা খুনিকে প্রশ্রয় দেয় সে মানুষও তো আমি খুঁজি না। খুন করার শক্তি না পেয়ে যারা মুখে মুখে মানুষ হত্যা করে সেও থাকো দূরে। কে রইলো বাকি, যারা আছো কাধে কাধ রেখে দাঁড়াও মানুষের পাশে। গর্তে লুকিয়ে কোন জীবন যাপন করতে চাও? তোমার অধিকার যে হরণ করে তার জন্য এক আকাশ পৃথিবী রেখে তুমি নিজেই হারাতে চাও পুতি গন্ধময় এক টুকরো অন্ধ কূপে?