• মেহেদী হাসান সোহেল
বাঙালিদের মধ্যে মানুষিক ভারসাম্যহীনতা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। যার ফলে কেউ বলে, ছেলে আমার, বউ আমার না কিন্তু ৮ বছর আগে তাকে বিয়ে করেছে।
কেউ বলে দেশ বিক্রি হয়ে গেছে কিন্তু নিজেকে বাংলাদেশী দাবি করে। কিন্তু দেশ রক্ষার সংগ্রামের জন্য কেউ নামে না। আমরাও তার অতীতের কৃতকর্মের কথা ভুলে গিয়ে জয়ধ্বনি দেই।
আবার কেউ বলে তিস্তায় পানি নেই কিন্তু ব্যারেজ খুলে দেয় না। যেখানে তিস্তার মত বড় নদীতে নেই বলছে, সেখানে পাঁচটি খালের মত নদী থেকে পানি নিতে বলছে।
সারাজীবন অসাম্প্রদায়িকতা শ্লোগান দিয়ে হঠাৎ করে সমঝোতার মাধ্যমে পিছু হটি। আমরা জনতাও এটাকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে মেনে নি। আসলে আমাদের বিচার বিবেচনার ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কান নাখুজে চিলের পিছে দৌড়ে ক্লান্ত হচ্ছি তাই রাজনীতিবীদরা খেলার ছকের মত কৌশল পরিবর্তন করছে। কারণ আমরা কোন লক্ষে স্থির থাকতে পারছি না।
নিজেরা নিজেদের ভাল-মন্দ বিচারের ক্ষমতা হারিয়ে অন্যের বয়ান উপর নির্ভর করে পথ চলছি। তাই বার পথ হারিয়ে নীতি পরিবর্তন করে দিক হারা জাতিতে পরিণত হয়েছি।
বিগত কয়েকদিন নববর্ষ পালন ও মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে দুপক্ষের বাকযুদ্ধে দেশ প্রকম্পিত হয়েছে। বাকযুদ্ধ চায়ের টেবিল থেকে একেবারে টিভির টকশোঁতে স্থান পায়। এমনকি মাওলানারাও টিভি টকশোতে এসে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে। ওনাদের এরআগে দেখা গিয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ তৈরির সময় আর হেফাজতের আন্দোলনের সময়। এসব মল্ল যুদ্ধের কারন তাদের ব্রান্ডিং করা যা সুচারু রুপে করতে সক্ষ্মম হয়েছে। কিন্তু আমরা নির্বোধ জাতি বুঝতে পারলাম না। অবশেষে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রাতে ঘুমাতে গেছে কারণ বিনা বাধায় মঙ্গল শোভাযাত্রা আর নববর্ষ পালন হয়েছে।
তবে, আমরা যারা অসাম্প্রদায়িকতার জয় হয়েছে ভেবে তৃপ্তি ঢেকুর গিলছি তাদের জন্য দুঃসংবাদ বাদ আছে। কারণ আমাদের প্রজন্মের বেশীরভাগ বাংলার ছয় ঋতু বা বার মাসের নামই জানে না। তার জানে শুধু ১৩ই ফেব্রুয়ারি আর ১৪ এপ্রিল নেচে গেয়ে দিন দুটোকে পালন করে, নিজেকে খাটি অসাম্প্রদায়িক বাঙালি হিসেবে দাবি করি। কিন্তু আমাদের সত্তা লুকিয়ে বার মাসের মাঝে। আমাদের গ্রাম-বাংলার সুখ-দুঃখ, আনন্দ ভালবাসা পরিবর্তন হয় ঋতু পরিবর্তনের সাথে। অসাম্প্রদায়িকতা মিশে প্রত্যেক ঋতুর মাঝে, আমাদের প্রকৃতির মাঝে।
যারা অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল তারা কোন সামাজিক আন্দোলন করে না নতুন প্রজন্মকে আমাদের গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি আর পরিবেশের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবা জন্য। আমাদের সংস্কৃতিকে উন্মুক্ত করে দিন, আগের জারি -সারি আর ভাটিয়ালিকে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিন, আমদের প্রজন্ম শ্লোগান ছাড়া অসাম্প্রদায়িক হয়ে যাবে।
দয়া করে আর আমাদের প্রজন্মকে বুদ্ধিশূন্য বানিয়ে নিজেদের আখের গোছাবেন না, তাহলে আমাদের জাতির গৌরব ও অস্তিত্ব ধুলোয় মিশে যেতে খুব বেশী সময় নিবে না।
মানুষিক বিকাশের জন্য নতুন প্রজন্মকে এখনই রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে পাঠানো উচিৎ। আর কালক্ষেপণ না করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানুষিক বিকাশে সচেতন হই এবং বুদ্ধি বিকাশের জন্য সবাই আয়োডিন যুক্ত লবন খাই।