স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটে দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত ভাতার টাকায় ভাগ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হলে সোমবার (২০ মার্চ) টাকা ফেরত দিয়েছেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান।
অবশ্য টাকা নেওয়া বা ফেরত দেওয়ার দুই আভিযোগই অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় ওই চেয়ারম্যান।
স্থানীয়রা জানান, রবিবার বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্দ্বীদের মাঝে ভাতার টাকা বিতরণের সময় জোরপূর্বক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেটে রাখা হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় অগ্রণী ব্যাংকের দেপাড়া শাখার কর্মকর্তারা রবিবার ইউনিয়ন পরিষদে এসে ভাতা ভোগীদের মাঝে টাকা বিরতণ করেন। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান সেখ শমসের আলীর নির্দেশে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে কেটে রাখা হয়।
যার ৫০ টাকা নিয়েছে ব্যাংকের কর্মকর্তারা এবং বাকি টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান। পরে ওই টাকা আজ সোমবার (২০ মার্চ) আবার চকিদার (গ্রাম পুলিশের) মাধ্যমে ফেরত দিয়েছে চেয়ারম্যান।
দুস্থ পাওয়া ভাতার টাকা থেকে ভাগ নেওয়ার একটি ভিডিও চিত্র হাতে পেয়েছে বাগেরহাট ইনফো ডটকম। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে চেয়ারম্যান, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৭ থেকে ৮ জন একটি টেবিলের চার পাশে বসে আসেছেন। ভাতা ভোগীদের একে একে নাম ধরে ডেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। বয়স্ক ভাতার টাকা পেয়ে এক ব্যাক্তি চেয়রম্যানের কাছে জানতে চাইছেন ওদা’ (দাদা) কত টাকা কাইটে রাখতিছেন? উত্তরে চেয়ারম্যান আঙ্গুলের ইশারায় বলছেন দুইশ টাকা।
এর পর, তিনি টাকা কেটে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলছেন, ‘খরচ বাবদ।’
ওই ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ভাতার টাকা ভাগ নিয়ে বয়স্কদের সঙ্গে দরকশাকশি করছেন একজন গ্রাম পুলিশ (চকিদার)।
গোটাপাড়া ইউনিয়নের দেপাড়া গ্রামের বাসিন্দা চান মিয়া (৮১) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘তিন হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিলো। সেখান থেকে আড়াশ টাকা করে প্রত্যেকের কাছ থেকে কেটে রাখছে। জিজ্ঞাস করলে বলেছে খরচের টাকা। পরে আজ (সোমবার) আবার চকিদার বাড়ি এসে টাকা ফেরত দিয়ে গেছে।
ওই গ্রামের মোশারফ হালদার, সাজেদ হালদার, এয়ার আলী পাইকদেরও (প্রতিবন্দ্বী) অভিযোগ ভাতার টাকা দেওয়ার সময় জন প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত খরচের টাকা বলে কেটে নেওয়া হয়েছে। পরে আজ সোমবার তারা টাকা ফেরত পাইছি।
গোটাপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সোবহান হালদার বলেন, ‘ভাতা পাওয়া প্রত্যেকের কাছ থেকে আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। যার ৫০টাকা নিছে ব্যাংক আর বাকি টাকা নিয়েছেন আমাদের চেয়াম্যান শমসের আলী।
বাগেরহাট সদর উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ওই ইউনিয়নে ৫৭৮ জন বয়স্ক, ২৭৫ জন বিধবা ও ১২৪ জন প্রতিবন্দ্বী মিলিয়ে মোট ভাতা ভোগীদের সংখ্যা প্রায় ৯৭৭ জন। এর মধ্যে রবিবার ১১৯ জন বয়স্ক, ১০৫ জন বিধবা ও ৬২ জন প্রতিবন্দ্বীর মাঝে ভাতার অর্থ প্রদান করা হয়।
ভাতা হিসাবে কার্ডধারী প্রতিবন্দ্বীরা প্রতি মাসে ৬০০ টাকা এবং বয়স্ক ও বিধবারা প্রতি মাসে ৫০০ করে টাকা পান। প্রতি ছয় মাস অন্তর ব্যাংকের মাধ্যমে তাঁদের ভাতার দেওয়া হয়।
টাকা নেওয়া বিষয়ে স্থানীয় এক গ্রামপুলিশের কাছে জানতে চাইলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব বলছিলো তাই আমারা টাকা নিছিলাম। কত টাকা নিছিলো তা আমি সঠিক জানি না। আজ (সোমবার) সকালে চেয়াম্যান সাহেব আমাদের কাছে টাকা দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফেরত দিতে বলেন। আমরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে টাকা ফেরত দিয়েছে।
এবিষয়ে জানতে গোটাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেখ সমশের আলী সঙ্গে যোগযোগ করা হলে টাকা নেওয়া বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ভাতা প্রাপ্ত বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্দ্বীদের প্রত্যেকের নিজ নামে ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) রয়েছে। তারা যে যার টাকা তোলেন। এই টাকা তো আমাদের নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা কোন টাকা নেই নি। তাই ফেরত দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
তিনি আরও বলেন, আমি শুনেছে ব্যাংক ভাতা ভোগীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছে। টাকা নেওয়া কোন বিষয় জানা নেই।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এর আগে সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ও কচুয়া উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্দ্বীদের ভাতার টাকা বিরতণের সময় জনপ্রতি ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কেটে নেওয়ার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে অগ্রণী ব্যাংক দেপাড়া শাখার ব্যবস্থাপক শঙ্কার কুমার পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, প্রথম তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন অবশ্য পরে তিনি বলেন, মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়ে রোববার বিকালে তাৎক্ষণিক ইউনিয়ন পরিষদে টাকা দেওয়া বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে আজ ব্যাংকে বাকিদের টাকা দেওয়া হয়েছে।
তার ভাষ্য, ব্যাংকের জায়গা কম হওয়াতে ভাতা ভোগীদের সুবিধার্থে ইউনিয়নে গিয়ে টাকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এর আগে বিষ্ণুপুর ও ধোপাখালী ইউনিয়নে টাকা নেওয়া কথা বিষয়ে জানতে চাইলে এধরনের কোন অভিযোগ জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
বাগেরহাট সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুদা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের নির্দেশে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় আমি অভিযোগের তদন্তে গোটাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে যাই। সেখানে গিয়ে ভাতার টাকা পাওয়া বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্দ্বী ভাতা গ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি।
অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার দু’টি ভিডিও ক্লিপ হাতে পেছি আমরা। এছাড়া ভূক্তভূগিতের কাছ থেকে আমরা অভিযোগ রেকর্ড করেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আজই জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এইচ/এসআই/বিআই/২০ মার্চ, ২০১৭
** স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, টাকা নিয়ে মিটমাটের চেষ্টা চেয়ারম্যানের