আব্দুল আউয়াল | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ির বাজার এখন মন্দা। স্থানীয় বাজারগুলোতে কমে গেছে গলদা চিংড়ির দাম। তবে দাম কমলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাগেরহাটের বাজারগুলোতে বাড়ছে গলদা চিংড়ির রপ্তানি অযোগ্য অংশের দাম।
স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গলদা চিংড়ির মাথার ‘ঘিলু’ এবং বিচ্ছিন্ন ‘পা’ এর ব্যপক চাহিদা এখানে। রপ্তানি না হলেও খেতে সুস্বাদু হওয়াতে বর্তমানে গলদা চিংড়ির ঘিলু আর পা-এর চাহিদা যেমন অন্য অনেক মাছের চেয়ে বেশি। তেমনি দামও চড়া।
দিন দিন চাহিদা বাড়ায় জেলার ফকিরহাট, চিতলমারী ও মোল্লাহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই অস্থায়ী ভাবে বসে এই ঘিলু এবং পা বিক্রির হাট। দূরদূরন্ত থেকে আসা ভোজন রসিক আর রসনা বিলাসিদের রীতিমত ভীড় পড়ে যায় এসব হাটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে বাগেরহাটসহ দক্ষিনাঞ্চলের জেলাগুলোতে আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে গলদা চিংড়ি। রপ্তানি যোগ্য চিংড়িগুলো চাষিরা প্রথমে স্থানীয় আড়ৎগুলোতে বিক্রি করেন। আড়তে চিংড়িগুলোকে আকৃতি অনুয়ায়ী বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করা হয়। সেখান থেকে তা প্রসেসিং এর জন্য চলে যায় ফ্যাক্টরিতে। এর আগেই আড়ৎগুলোতে চিংড়ির শরীর থেকে মাথা ও শাস যুক্ত পাগুলোকে আলাদা করা।
অনেক ক্ষেত্রে আবার মাছ কম্পানিগুলোতে গিয়েও আলাদা করা হয় এই মাথা এবং পা। এসব মাছ কম্পানি এবং আড়ৎগুলোতে কাজ করা শ্রমিকরাই মুলত নাম মাত্র মূলে সেখান থেকে চিংড়ির বিচ্ছিন্ন মাথা ও পা নাম কিনে নিয়ে আসেন।
সন্ধ্যা থেকে তারা সেগুলো নিয়ে ফকিরহাটের ফলতিতা মৎস্য আড়তের সামনে, ফকিরহাট পুরাতন রেলষ্টেশন এলাকায়, ফকিরহাট কাজী আজাহার আলী কলেজের সামনে, ফকিরহাট বিশ্ব রোডের মোড়, চিতলমারী উপজেলা সদরের ষ্টীল ব্রিজ এলাকা, মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা, নাশুখালী বাজার, জয়ডিহি এলাকায় বিক্রির জন্য বসেন।
ফকিরহাট কলেজ গেট সংলগ্ন সন্ধ্যা মার্কেটে ঘিলু কিনতে আসা নাজমুল আহসান মনি জানান, শীত মৌসুমে গলদা চিংড়ির ঠ্যাঙের (পায়ের) শাস অত্যন্ত সুস্বাদু। মাথার ঘিলুরও খুব সাদ। এখানে নিয়মিত চিংড়ির ঘিলু, মাথা এবং পা বিক্রি হয়। সন্ধ্যার কিছু আগে থেকে রাত পর্যন্ত এখানে চিংড়ির ঘিলু ও পা বিক্রি হয়।
এই হাটের বিক্রেতা মামুনুল হুদা বলেন, বর্তমানে ঘিলু প্রতি কেজি একশ পঞ্চাশ থেকে দুইশ টাকা দরে বিকি হচ্ছে। বাজার ভালো থাকলে দুইশ পচিশ টাকাও পাওয়া যায়। পায়ের দামের অবশ্য কোন ঠিক নেই। যখন যেমন পাওয়া যায়।
বিক্রেতা কালাম মিয়া বলেন, আগে এগুলোর তেমন দাম পাওয়া যেত না। এখন ভালোই চাহিদা। তাই বিক্রিও আগের চেয়ে বেড়েছে। বেচাকিনি কোটামুটি ভালোই।
বেসরকারি চাকুরিজীবি মো. মুরাদুল ইসলাম জানান, বাসার সবাই চিংড়ির ঘিলু এবং পা পছন্দ করে। পায়ের মাঝে একটি শাস থাকে। ঘিলুর মতো এটাও খেতে খুব সুস্বাদু। একটা কাজে ফকিরহাট এসেছিলাম। এখানে এগুলো ভালো পাওয়া যায় তাই নিয়ে যাচ্ছি।
বাগেরহাট জেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন জানান, চলতি বছরে জেলার নয়টি উপজেলায় প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে। মূলত রপ্তানি যোগ্য হওয়াতে বাগেরহাটসহ দক্ষিণঞ্চালে দিন দিন চিংড়ি চাষ প্রসার লাভ করেছে।
ব্যাপক ভাবে চাষ হলেও স্থানীয় বাজার এবং সাধারণের কাছে চিংড়ির দাম বরাবরই চড়া। প্রথম দিকে মাথা ও পা রপ্তানি না হওয়াতে খুব সস্তায় পাওয়া যেত। তবে বর্তমানে ভোজন রসিকদের কাছে কদর বাড়ায় চাহিদার সঙ্গে মাথা, ঘিলু এবং পায়ের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে জমে উঠছে এসব ক্ষুদ্র হাটগুলো।
এইচ/এসআই/বিআই/২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭