স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সুন্দরবনের করমজল থেকে এক সপ্তাহের মাঝে ৬০টি কুমির ছানা নিখোঁজ ও হত্যার ঘটনায় বিরল প্রজাতির একটি ‘চিতা বিড়াল’কে গুলি করে হত্যা করেছে বন বিভাগ।
রোববার দিনগত গভীর রাতে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির লালনপালনের একটি কৃত্রিম পুকুর (প্যান) প্রবেশ করলে বিড়ালটিকে হত্যা করা হয়।
কুমির ছানা হত্যার ঘটনায় নজরদারি কালে চিতা বিড়ালটি গুলি করে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, তিন দফায় ৬০টি কুমির ছানা হত্যা ও নিখোঁজের ঘটনার পর গত রাত থেকে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে নজরদারি বাড়ানো হয়। পর্যবেক্ষণে কুমিরের প্যান গুলোর ভেতরে ও বাইরে ক্যামেরা সেট হয়। গভীর রাতে একটি চিতা বিড়াল এসে প্যানে প্রবেশ করে।
ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বিড়ালটি প্যানে প্রবেশের পর আগের রাতে হত্যা করা কুমিরের ছানাগুলো খাচ্ছে। বিষয়টি বন কর্মীদের নজরে আসার পর নানা ভাবে বিড়ালটিকে আটকের চেষ্টা করা হয়। তবে কোন ভাবে বিড়ালটিকে ধারা সম্ভাব না হওয়ায় এবং প্রাণীটি হিংস্র হওয়ায় হামলার আসঙ্কায় তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
চিতা বিড়ালটিকে হত্যার পর ময়না তদন্তের জন্য সকালেই মৃতদেহ খুলনায় পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডিএফও জানান, বিড়ালটির লম্বার দুই থেকে আড়াই ফুট হবে।
উইকিপিডিয়া বলছে, চিতা বিড়াল (ইংরেজি: Leopard cat, বৈজ্ঞানিক নাম: Prionailurus bengalensis) আকারে ছোট ও প্রায় পোষা বিড়ালের সমান একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী চিতা বিড়াল একটি সংরক্ষিত প্রজাতি।
সংরক্ষিত প্রজাতির প্রাণী হিসাবে আইনের ৬ ধারা মোতাবেক বন্যপ্রাণীটি শিকার নিষিদ্ধ এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিকারে সহায়তা করলে বা উক্ত অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা প্রদান করে থাকলে তা দন্ডিনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জানুয়ারি, ৩০ জানুয়ারি কেন্দ্রের দুটি প্যান থেকে ৪৩টি কুমিরর ছানা নিখোঁজ হয়। যার মধ্যে মৃত অবস্থায় ৬টি এবং দুটি লেজ ও একটি মাথা পাওয়া। এর পর ৫ ফেব্রুয়ারি ১৪টি মৃতদেহ, দুটি লেজসহ ১৭টি কুমির ছানা হত্যার কথা জানায় বন বিভাগ।
প্রথমে দুই দফায় কুমির ছানাগুলো নিখোঁজের পর শিয়াল বা বন বিড়াল এগুলোকে নিয়ে গেছে প্রচার করলেও বন বিভাগ পরে দাবি করে, দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের জেরে বাচ্চাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে।
করমজল কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করে লস্কার মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে করে বন বিভাগ। এছাড়া চাকরিচ্যুত করা হয় চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী জাকির হোসেনকে।
সর্বশেষ চিতা বিড়াল হত্যার হত্যার মাধ্যমে ৬০টি কুমির ছানা নিখোঁজ ও হত্যার জন্য বিড়ালকে অভিযুক্ত করার দিবে যাচ্ছে বন বিভাগ। তবে ছোট একটি চিতা বিড়াল ৩ রাতে এতগুলো কুমির ছানা হত্যা করেছে বলে বন বিভাগের সবশেষ অনুমানটি হাস্যকর হিসাবে দেখছেন অনেকে।
এইচ/এসআই/বিআই/০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
** সুন্দরবন থেকে এক সপ্তাহে ৬০ কুমির ছানা গায়েব