সিডর বিধ্বস্ত জনপদ ঘুরে, ইনজামামুল হক । বাগেরহাট ইনফো ডটকম
প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের কথা মনে পড়লে এখনো শিউরে ওঠে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে মানুষ। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানা এ যাবৎকালে সবচেয়ে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহারান জেলার সহস্রাধিক মানুষ।
বেসরকারি হিসাবে নিহতের এ সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। বিধ্বস্ত হয় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছপালা। মারা যায় লক্ষাধিক গবাদি পশু।
স্থানীয়রা মনে করেন, সিডরের সময়ে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় প্রলয়ঙ্করী এ ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এই জেলায় এতো বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
তখন থেকেই উপকূলবাসীর অন্যতম প্রধান দাবি ছিল পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টার নির্মাণ।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, সিডরের পর সাউথখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সাইক্লোন শেলটার হলেও এতে ধারণ ক্ষমতা অনেক কম। ঘূর্ণিঝড় সতর্ক সংকেত ঘোষণা হলে এই শেলটারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। অনেকে শেলটারে জায়গাও পান না। একই স্থানে একাধিক শেলটার রয়েছে, আবার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শেলটার নেই। অনেকগুলো আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী। অনেক স্থানে শেলটারে যাওয়ার রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ।
সিডরের মত প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পরে উপকূলবাসীর সচেতনতা বাড়লেও পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ হয়নি ৯ বছরেও। ফলে দূর্যোগের সঙ্গে নিত্ব সংগ্রাম করে টিকে উপকূলের মানুষগুলো ঘূর্ণিঝড় সতর্ক সংকেত জারি হলেই আত্মঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েন।
সূত্র বলছে, সিডরের পর শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নে বেশকিছু সাইক্লোন শেলটার এবং স্কুল কাম সাইক্লোন শেলটার নির্মাণ করা হয়েছে। পুরানো শেলটার সংস্কারও হয়েছে। নির্মিত হয়েছে রাস্তাঘাট। কিন্তু এসব কার্যক্রম পরিচালনায় সমন্বয়ের যেমন অভাব ছিল, তেমনি মানুষের ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
বিভিন্ন এলাকায় জনসংখ্যার হিসাবে যে ক’টি সাইক্লোন শেলটার ও স্কুল কাম সাইক্লোন শেলটার (আশ্রয়কেন্দ্র) রয়েছে তা খু্বই কম।
রায়েন্দা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে শেলটার আছে মাত্র একটি। এর ধারণ ক্ষমতা ৬০০। অথচ এই ওয়ার্ডে লোকসংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। বাকি লোকের আশ্রয়ের সুযোগ নেই। গোটা শরণখোলা উপজেলায় বড় দুর্যোগ হলে বড় একটি জনগষ্ঠিকেই আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা দেবার সুযোগ নেই। আশ্রয়কেন্দ্রে অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও রয়েছে নামেমাত্র।
তাই এসব এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব হিসাব করে পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে গবাধি পশু রাখার সু-ব্যবস্থা রাখার দাবি স্থানীয়দের।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অগ্রদূত ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আইউব আলী আকন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সিডর বিধ্বস্ত শরণখোলায় প্রয়োজনের তূলনায় সাইক্লোন শেলটার এখনও অনেক কম। দ্রুত এই এলাকায় নতুন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা দরকার। সেই সাথে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে একটি নিদৃষ্ট ব্যবস্থাপনা ও সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় আনাতে হবে।
শরণখোলার স্থানীয় সাংবাদিক ইসমাঈল হোসেন লিটন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, মানুষ এখন দুর্যোগ এলে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায়। তাবে তারা একই সাথে নিজেদের গবাধি পশু-পাখিসহ সম্পদও রক্ষা করতে চায়। তাই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে সে ভাবে তৈরি করতে হবে। যাতে জীবনের পাশাপাশি সম্পদও রক্ষা করা যায়।
জনসংখ্যার তুলনায় জেলায় পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টার না থাকার কথা স্বীকার করেছে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসনও।
জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে জেলায় বর্তমানে ২৩৪ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। চলতি অর্থবছরে নতুন করে আরও ১৯টি নির্মানা করা হচ্ছে।
জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যায়ক্রমে জেলায় আরও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে যাতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধার সহ গৃহপালিত পশু-পাখি রাখার সুব্যবস্থা থাকে এখন থেকে এমন ডিজাইনে অবকাঠামো নির্মাণে জোর দেওয়া হবে।
⇒ ‘সিডর শিশুরা’ বেড়ে উঠছে মানসিক ব্যাধি নিয়ে!
⇒ কাজের খোঁজে উপকূলে বাড়ছে শহরমুখীতা
⇒ সিডরের ৯ বছরেও হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ
⇒ উপকূলের বিভীষিকা সিডর !
এইচ/এসআই/বিআই/২০ নভেম্বর, ২০১৬