সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
‘রামপালে বাস্তবায়নাধীন তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি শতভাগ পরিবেশবান্ধব। উপযুক্ত স্থানেই অত্যাধুনিক এই প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিছু লোক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন।’
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বাগেরহাট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি করেন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) প্রতিনিধিরা।
কিছু লোক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই প্রকল্পের বিষয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরীর চেষ্টা করছেন অভিযোগ করে বিআইএফপিসিএল প্রতিনিধিরা প্রকল্পের বিপক্ষে আন্দোলনকারী ‘তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’র সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ-এর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাগেরহাট-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাড. মীর শওকাত আলী বাদশা।
সভার আয়োজক বিআইএফপিসিএলের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, প্রতিষ্ঠানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ইন্দ্রজিৎ বসাক, উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নরেন্দ্র লোধ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি খন্দকার আজিজুর রহমান, রামপাল প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএসের প্রতিনিধি প্রণব কুমার হালদার প্রমুখ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি খন্দকার আজিজুর রহমান বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি নির্ভর অত্যাধুনিক একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের দ্বারা সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকার মাটি, পানি, বায়ু ও প্রাণ বৈচিত্রের কোন ক্ষতি হবে না। এটি একটির শতভাগ পরিবেশ বান্ধব প্রকল্প। কিন্তু কিছু লোক এই প্রকল্প সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
‘জাতীয় কমিটি’র সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ-এর নাম উল্লেখ করে খন্দকার আজিজুর রহমান বলেন, উনি (আনু মুহাম্মদ) ইঞ্জিনিয়ারও না, বিদ্যুৎকেন্দ্র দেখেনও নাই, চালানও নাই। উনি কিসের বিশেষজ্ঞ ? উনি কি পরিবেশ বিশেষজ্ঞ? উনি কি পাওয়ার প্লান্ট বিশেষজ্ঞ? হতে পারে ইউনিভার্সিটির শিক্ষক।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডা. মোজাম্মেল হোসেন এমপি তার বক্তৃতায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে তাতে অনেকেই ঈর্ষান্বিত। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবার আগেই যারা এই প্রকল্পে দূর্নীতির গন্ধ পেয়েছিলেন তারাই আবার এখন পদ্মা সেতু প্রকল্পে টাকা দিতে চাচ্ছেন।
‘সরকার সব দিক গভীরভাবে বিবেচনা করেই রামপালে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যারা এ নিয়ে মানুষকে ভুল বুঝাচ্ছেন, তারা একদিন এজন্য মানুষের কাছে জবাবদিহি করবেন।’
সভায় জানানো হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ আগামী বছরের জানুয়ারি নাগাদ শুরু হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আয়োজকরা জানান, এখানকার উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর ইউনিটপ্রতি মূল্য অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে কম-বেশী হতে পারে। তবে প্রকল্পর প্রস্তাবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছিলো ৭-৮ টাকা। এখন বিশ্ব বাজারে তেল ও কয়লার দাম পড়ে যাওয়ায় তা কমে এসেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানী হিসেবে অতি উন্নত মানের কয়লা আমদানি করা হবে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে তা পরিবহণ করা হবে। এজন্য সুন্দরবনের ভেতরে পৃথক কোন জলপথ ব্যবহার করা হবে না। দীর্ঘ ষাট বছর ধরে মংলা বন্দরে যে পথে জাহাজ আগমণ-নির্গমণ হয় সেই পথেই অর্থাৎ ফেয়ারওয়ে বয়া থেকে পশুর নদীপথে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে কয়লা আনা হবে।
বাগেরহাটে কর্মরত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন, বেতার ও অন লাইন গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, ২০২১ সাল নাগাদ সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
বর্তমানে দেশের শতকরা ৭৬ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পরিসেবার আওতায়। এই সময়ের মধ্যে বাকি ২৪ ভাগ মানুষের মাঝে বিদ্যুৎসেবা পৌছে দিতে হবে। আর এজন্য কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশাল ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমিকা মাত্র দুই শতাংশ।
এএইচ/এসআই/বিআই/১৫ নভেম্বর, ২০১৬