স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পিঠা মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার অগ্রহায়ণের প্রথম দিন (১৫ নভেম্বর) সকালে বাগেরহাট স্বাধীনতা উদ্যানে এ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন।
বাগেরহাটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশা, বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) গৌতম কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।
পরে অতিথিরা স্বাধীনতা উদ্যানে আয়োজিত দিনব্যাপী পিঠা মেলা ঘুরে দেখেন। মেলায় শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের মোট ২০টি স্টল বাহারি পিঠার পসরা নিয়ে যোগ দেয়।
এছাড়াও নবান্ন উৎসবের আলোচনা সভা শেষে স্বাধীনতা উদ্যানের বিজয় মঞ্চে আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
নবান্ন উৎসব-
‘নবান্ন উৎসব’ শস্যভিত্তিক একটি ঐতিহ্যবাহী ‘লোকউৎসব’। কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় প্রধান শস্য সংগ্রহকে কেন্দ্র করে এ উৎসব পালিত হয়ে থাকে।
উইকিপিডিয়া বলছে, বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম।”নবান্ন” শব্দের অর্থ “নতুন অন্ন”। নবান্ন উৎসব হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
কোথাও কোথাও মাঘ মাসেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে। নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড় সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা।
বাংলাপিডিয়া বলছে, উত্তর-পশ্চিম ভারতের ওয়াজিরাবাদে রবিশস্য গম ঘরে তোলার আনন্দে নবান্ন উৎসব পালিত হয় বৈশাখ মাসে। বাংলাদেশের কয়েকটি উপজাতিও তাদের প্রধান ফসল ঘরে তোলার পর নবান্ন উৎসব পালন করে।
সাঁওতালরা পৌষ-মাঘ মাসে শীতকালীন প্রধান ফসল ঘরে তুলে উদ্যাপন করে সোহরায় উৎসব। তারা সাতদিন সাত রাত গানবাজনার মাধ্যমে এ উৎসব পালন করে। উসুই উপজাতি অন্নদাত্রী লক্ষ্মীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে মাইলুকমা উৎসব পালন করে। জুম চাষি ম্রো উপজাতি চামোইনাত উৎসবে মুরগি বলি দিয়ে নতুন ধানের ভাতে সবাইকে ভূরিভোজন করায়। ফসল তোলার পর গারো উপজাতি ফল ও ফসলের প্রাচুর্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে পালন করে পানাহার ও নৃত্যগীতবহুল ওয়ানগাল্লা উৎসব।
বাংলাদেশে নবান্ন উৎসব পালন করত প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়। হেমন্তে আমন ধান কাটার পর অগ্রহায়ণ কিংবা পৌষ মাসে গৃহস্থরা এ উৎসব পালনে মেতে উঠত। উৎসবের প্রধান অঙ্গ ছিল নতুন চালে পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ করা। পরে দেবতা, অগ্নি, কাক, ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়-স্বজনদের নিবেদন করে গৃহকর্তা ও তার পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করতেন।
এ উপলক্ষে বাড়ির প্রাঙ্গণে আলপনা আঁকা হতো। পিঠা-পায়েসের আদান-প্রদান এবং আত্মীয়-স্বজনের আগমনে পল্লীর প্রতিটি গৃহের পরিবেশ হয়ে উঠত মধুময়। সর্বত্র গুঁড়ি কোটার শব্দ, শাঁখের শব্দ ইত্যাদিতে গ্রামাঞ্চল হয়ে উঠত প্রাণবন্ত। পাড়ায়-পাড়ায়, বাড়িতে-বাড়িতে বসত কীর্তন, পালাগান ও জারিগানের আসর।
কৃষকরা নতুন ধান বিক্রি করে নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ কিনত। বর্তমানে সেসবের অনেক কিছুই লোপ পেয়েছে।
এইচ/এসআই/বিআই/১৫ নভেম্বর, ২০১৬