• ডা. সংগ্রাম কান্তি কুন্ডু
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ও অপরিহার্য শাখা ‘ফিজিওথেরাপি’। এটি কোন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। প্রাচীন গ্রিসে ম্যাসেজ ও ম্যানুয়াল থেরাপির মাধ্যমে সূচনা হয় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার।
ফিজিও (শারিরীক) এবং থেরাপি (চিকিৎসা) দুটি শব্দ মিলে ফিজিওথেরাপি বা শারিরীক চিকিৎসার সৃষ্টি।
বর্তমানে ফিজিওথেরাজি চিকিৎসা আকটিনোথেরাপী, ইলেকট্রোথেরাপী, হাইড্রোথেরাপী ও এক্সারসাইজের সম্বনয়ে গঠিত এবং নিউরোলজিক্যাল অর্থোপেডিক্স (মাইকিউলো ইস্কিট্যাল) গাইনোলজিক্যাল, কার্ডিওপালমোনারি, পেড়িরেট্রিক্স এবং পূনর্বাসনে একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
৮ই সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপী দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় “Add life to Years’’ অর্থাৎ বয়সের সাথে প্রান জুড়ে নিন।
কুসংস্কারমুক্ত সমাজে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারনে মানুয়ের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে সাথে দৈনন্দিন কাজ উদাহরণ স্বরূপ – আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে সাধরন মানুষ পায়ে হেঁটে, নৌকায়, বাই সাইকেলে করে তাদের দৈনন্দিন কাজ করত কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এখন তৈরী হয়েছে ব্যাচারি চালিত রিক্সা, ভ্যান, ইজিবাইক, ডার কালক্রুতিতে আমরা পায়ে হেঁটে যাওয়া পথ অতিক্রম করার জন্য এই যন্ত্রের সরনাপন্ন হচ্ছি।
অন্যদিকে পান্তা ভাত, জাও ভাতের পরিবর্তে খাবার তালিকায় যুক্ত হয়েছে পরট, স্যান্ডইচ, কোমল পানীয় যা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত জন্য খুবই ক্ষতিকর। কম্পিউটার, মোবাইল, ট্যাব এবং ফোনের চেয়ার ব্যবহারের কারনে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমরা বিভিন্ন ধরনের ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছি। অতিরিক্ত ব্যাথানাশক ঔষধ ব্যবহারের কারনে কিডনি, যকৃত, ডায়াবেটিক ম্যালাইট্যাস সহ বিভিন্ন ধরনের মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফিজিওথেরাপী সেবা প্রদান করে ফিজিওথেরাপিস্টরা। সরকার অনুমদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অফ সায়েন্স ইন ফিজিওথেরাপি ডিগ্রী প্রাপ্ত গনই ফিজিওথেরাপিস্ট (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গ্রেজেট ১৯৮৫)। এছাড়া রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ থেকে তিন বছর মেয়াদী কোর্স সম্পর্ন কারী ডিপ্লোমা ফিজিওথেরাপিস্টরা বা থেরাপী সহকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া কারিগারী শিক্ষা বোর্ড থেকে বিভিন্ন মেয়াদী কোর্স চালু রয়েছে।
বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি এনজিও ফিজিওথেরাপী সেবা প্রদান করে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে ১০৩ টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপী, অকুপেশনাল থেরাপী এবং স্পিচ থেরাপী সেবা প্রদান করছে।
এছাড়া সরকারী মেডিকেল কলেজ হসপিটালে ফিজিওথেরাপী সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশালসহ সকল বিভাগীয় শহরের বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ফিজিওথেরাপী সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া CRP,CDD সহ বিভিন্ন NGO ফিজিওথেরাপী সেবা প্রদান করছে।
একটি ফিজিওথেরাপি ইউনিটে সাধারণত অট্ধসঢ়;্রা সাউন্ড থেরাপি (ইএসটি) সর্টওয়েভ ডায়াথার্মি (এস ডাব্লুডি), অটোট্রাক্সান বেড, ইন্টারফ্যারেনশিয়াল (আইএফটি), ইলেকট্রিকাল মাসেল ইস্টিমুলেটর (ইএমএস), ট্রান্সকিইটিনিয়াস নার্ভ স্টিমুলেটর (টিইএনএস) মেশিন থাকে। এবং স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস রোগীদের ক্ষেত্রে কন্টিনিউয়াস প্যাসিভ মুভমেন্ট (সিপিএম), ট্রিল্ট বেড, বোবার্থ বেড, প্যারালাল বার, জিমবল ইত্যাদি থাকা বঞ্চনীয়। এক্সারসাইজের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত মাংসপেশীর স্ট্রেচিং, স্ট্রেন্দেনিং এবং এস্টাবিলাইজেশন করে থাকি।
এছাড়া ব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে বিশেষায়িত টেকনিক ব্যবহার করা হয়। অটিতজম এবং সেরিব্রাল পালসি রোগীর ক্ষেত্রে এক্সারসাইজ স্টিমুলেশন এবং সহায়ক উপকরণ পুনবাসনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহণ করে। অর্থোপেডিক্স অপারেশন পরবর্তী ইস্টিফনেস এর ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব অনেক।
ফিজিওথেরাপি এর মূল উদ্ধেস্য ;দশ্য হচ্ছে দূর্বল মাংস পেশীকে শক্তিশালী করে দেহের সাধারন এ্যালাইমেন্ট ঠিক রেখে যথাযথ ভাবে মুভমেন্ট করা এবং কিছু সহায়ক উপকরণ প্রদাণ করে শরীরকে কর্মক্ষম রাখা। সাধারনত স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস, গাছ থেকে পড়ে যাওয়া অথবা দূঘটনায় আক্রান্ত হওয়া spinal cord injury রোগীদের ফিজিওথেরাপি সেবা অনেক গুরুত্ব বহন করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাটু, কোমড়, ঘাড়, কাধে ব্যথ্যা অনুভুত হয়। এই ব্যথা প্রতিরোধে ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
পরিশেষে আজকের এই দিবসটি বাংলাদেশের সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উজ্জাপিত হচ্ছে। সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তায় নিবেদিত হয়ে প্রত্যেকটি ফিজিওথেরাপিষ্ট কে আরোও দায়িত্ব বেশী দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রচলিত ধারারচিকিৎসার সাথে সাথে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন সূস্থ্য থাকুন।
লেখক : কনসালটেন্ট (ফিজিওথেরাপি) প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, বাগেরহাট।
মোবাঃ- ০১৭৩৭-৩৭৭৭১৫