স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
মংলায় অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় প্রধান সমুদ্র বন্দরের দু’টি অসম্পূর্ণ জেটির (৩ ও ৪ নম্বর) উন্নয়ন ও পরিচালনার কাজ পেয়েছে বেসরকারি কোম্পানি পাওয়ারপ্যাক পোর্টস লিমিটেড।
পিপিপি’র (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আওতায় মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পাওয়ারপ্যাক পোর্টস অসমাপ্ত জেটি দু’টির নির্মাণ কাজ শেষ করবে। কাজ শেষে আগামী ৩০ বছর পর্যন্ত বন্দরের ৩ ও ৪ নম্বর জেটি দুটি পরিচালনা করবে বেসরকারি ওই প্রতিষ্ঠানটি।
রোববার (২১ আগস্ট) রাজধানী ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পাওয়ারপ্যাক পোর্টস লিমিটেড-এর মধ্যে এ সংক্রান্ত এক চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ এবং পাওয়ারপ্যাক পোর্টস লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার নিজ নিজ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, নৌপরিবহন সচিব অশোক মাধব রায় এবং মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী মো. আলতাফ হোসেন খান উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তির মেয়াদ হবে কাজ শুরুর তারিখ থেকে ৩০ (ত্রিশ) বছর পর্যন্ত। জেটির কমার্শিয়াল অপারেশন শুরু হবে কাজ শুরুর তারিখ থেকে দুই বছর পর। পাওয়ারপ্যাক পোর্টস লিমিটেড তাদের লভ্যাংশ মংলা বন্দরের সঙ্গে ভাগ করে নেবে।
প্রথম পাঁচ বছরে জেটিতে আগত জাহাজের শেয়ারিং মংলা বন্দর পাবে ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ, যা পরবর্তী ৫ বছর ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ এবং তৎপরবর্তী ১৮ বছরে হবে যথাক্রমে ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এর পাশাপাশি কমার্শিয়াল অপারেশনের প্রথম বছরে পাওয়ার প্যাক কোম্পানি মংলা বন্দরকে দুই লাখ ইউ এস ডলার পরিশোধ করবে। যা পরবর্তী বছরগুলোতে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অপারেশনের প্রথম বছরে মংলা বন্দরের লাভ হবে ৭ (সাত) কোটি টাকা যা পরবর্তীতে ৬০ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। ভেরিঅ্যাবল রয়েলটি হিসেবে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পাবে কন্টেইনার প্রতি দুই ইউ এস ডলার এবং প্রতি টন সাধারণ (জেনারেল) কার্গো হ্যান্ডলিং এর জন্য পাবে দশমিক ২০ ইউ এস ডলার।
প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ইউ এস ডলার। যা বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক এক লাখ টুয়েন্টি ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিটস (টিইইউজ) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।
নৌমন্ত্রী বলেন, মংলা বন্দরের উন্নয়নে সরকার খুব আন্তরিক। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় একটি লোকসানি বন্দরকে লাভজনক বন্দরে পরিণত করা হয়েছে। বিএনপির শাসনামলে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে মংলা বন্দরের লোকসানের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর এখন ২০১৬ সালে এসে বন্দরের লাভ হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে এ বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল ১৪২টি; আর ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪৮২টি। ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে এ বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৫,৬৪৯ টিইইউজ; আর ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে প্রায় ৪১,৯৫৩ টিইইউজ।
শাজাহান খান বলেন, মংলা বন্দরের উন্নয়ন অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। মংলা বন্দর বাংলাদেশের ২য় বৃহৎ আন্তর্জাতিক বন্দর এবং দেশের স্বার্থরক্ষার সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই ২০০৮-২০১৬ সাল পর্যন্ত এ বন্দরের উন্নয়নের জন্য ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। আজকের এই প্রকল্পটিসহ বর্তমানে ৬৬৬ কোটি টাকার তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
এছাড়া ২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বিভিন্ন পর্যায়ে অনুমোদনাধীন রয়েছে। উক্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে মংলা বন্দরের বার্ষিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বেড়ে দাঁড়াবে ১০ লাখ (টিইইউজ)।
বর্তমানে মংলা বন্দরে পাঁচটি জেটি চালু রয়েছে। পিপিপির আওতায় চালু করা হচ্ছে তিন ও চার নম্বর জেটি। এছাড়া সরকার মংলা সমুদ্র বন্দরে পর্যায়ক্রমে মোট ১১টি জেটি চালু করা হবে।
এসআই/বিটি/বিআই/২১ আগস্ট, ২০১৬