স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
৯৯ বছরে পদার্পণ করল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বাগেরহাট সরকারি পিসি (প্রফুল্ল চন্দ্র) কলেজ।
মঙ্গলাবার (৯ আগস্ট) সকালে ৯৯ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে কলেজ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়।
ঐতিহ্যবাহী সরকারি পিসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এএইচএম ছালেকের নেতৃত্বে কলেজের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা র্যালিতে অংশ নেন।
র্যালিটি কলেজ চত্ত্বর প্রদক্ষিণ শেষে ক্যাম্পাসের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের (পিসি) প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করেন অধ্যক্ষ এএইচএম ছালেক। পরে কলেজ শিক্ষক পরিষদ, ছাত্র সংসদ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন পিসি রায়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
পরে ঐতিহ্যবাহী সরকারি পিসি কলেজের ৯৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঐতিহ্যবাহী সরকারি পি.সি. কলেজ:
বাঙালি তথা ভারতের বিজ্ঞান ভাবনার অগ্রদূত বিশ্ববরেণ্য পদার্থ বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় তৎকালীন খলিফাতাবাদ ও হাবেলী পরগনার জমিদার, সাধারণ মানুষ ও বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিগণদের নিয়ে ১৯১৬-১৯১৮ সাল সময় কালে “বাগেরহাট কলেজ” এর ভিত্তি রচনা করেন।
পরবর্তিতে ১৯১৮ সালের ০৯ আগস্ট বাগেরহাট শহরের পশ্চিম পাশে বর্তমান পৌর শহরের হরিণখানা এলাকায় অবস্থিত কলেজটিকে “প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ” নামে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি প্রদান করেন। সে সময় আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের অনুরোধে ঋষি কামাখ্যাচরণ নাগ এ কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
তাঁর ছিল অসাধারণ পান্ডিত্য। ইংরেজী, বাংলা, সংস্কৃত, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, অর্থনীতি, ইতিহাস, দর্শন, প্রভৃতি বিষয়ে তিনি তাৎণিকভাবে শ্রেণী পাঠদান করতে পারতেন। প্রায় ২২ বছর যাবৎ তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
সে ময়ম কলেজটি কে চালিয়ে নিতে কলেজের গঠনকালে গভার্নিং বডির সদস্যদের সাথে নিজে দ্বারে দ্বারে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করতেন তিনি। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত ইংরেজী, গনিত, ইতিহাস, ও সংস্কৃত বিষয়ে অনার্স পড়ানো হতো। পরবর্তীতে বাংলা, অর্থনীতি, আরবী ইত্যাদি বিষয়ে অনার্স খোলা হয়।
১৯৪৬ সালের ৩০ মার্চ বিচারপতি চারুচন্দ্র বিশ্বাস। কলেজের বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বেঙ্গল কেমিক্যালস থেকে বিনামূল্যে প্রাদান করা হয়। শহরে যখন বিদ্যুৎ আসেনি তখন পিসি কলেজে নিজস্ব ডায়নামা বসানো হয় যার দ্বারা কলেজ আঙ্গিনায় জ্বলতো বিদ্যুতের আলো। শহরের বাইরের ছাত্র বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজন হয় হোষ্টেলের। স্থাপিত দুইটি ছাত্রাবাস।
১৯৪৭ সালের দিকে ১০ বিভাগের পর সাময়িকভাবে এ কলেজের অগ্রগতি কিছুটা ব্যহত হয়।
১৯৬০ সালে এ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার এবং হোস্টেলে প্রায় ৫শত ছাত্রের আবাসনের ব্যবস্থা ছিল। এসময় পুনরায় বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখায় ডিগ্রী কোর্স চালু হয়।
সে সময় সাতক্ষীরা, যশোর, গোপালগঞ্জ এবং বরিশালের পশ্চিমাঞ্চলের শিার্থীরা এ কলেজে পড়াশুনা করতো।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালের ৭ মে তৎপালিন বাংলাদেশ সরকারের রাষ্টপতি কলেজটি জাতীয়করণ করেণ। ১৯৯৬ সাল হতে কলেজটিতে ১৪ টি বিষয়ে অনার্স ও ৬ টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু আছে।
বর্তমানে প্রায় ২০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত সরকারি পিসি কলেজের একাদশ-দ্বাদশ, অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স মিলিয়ে প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় চলতি বছর বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ খুলনা বিভাগে ৮ম, দেশের মধ্যে ৮৯ তম হয়েছ।
এইচ/এসআই/বিআই/০৯ আগস্ট, ২০১৬