স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বর্ষায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং টানা বৃষ্টিপাত ও জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে বাগেরহাট জেলার নিম্নাঞ্চল। সেইসঙ্গে ভাঙন আতঙ্ক বাড়ছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে।
এদিকে, পানির তোড়ে বাড়ছে মধুমতি নদীর ভাঙর। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে মধুমতির গর্ভে বিলীন হয়েছে চিতলমারী উপজেলায় ২৬টি বসতঘরসহ কয়েক একর জমি।
চিতলমারীর বড়বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে ইউনিয়নের পরানপুর ও কলাতলা ইউনিয়নের মচন্দপুর গ্রাম মধুমতি নদী ভাঙছে। চলতি বছর বর্ষায় নদীতে পানির চাপ বাড়ায় গেল এক সপ্তাহ ধরে ভাঙন আবার তীব্র হয়েছে।
বিগত ৫ বছরে বড়বাড়িয়া ও কলাতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫০ বিঘা ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাগান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক ভাঙনে চিতলমারী-মোল্লাহাটের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ভাঙনে ঘরহারা পরানপুর গ্রামের বিধবা শরীফা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তাদের বাগান,পারিবারিক কবরস্থান, বসতবাড়িসহ জায়গাজমি নদীর পেটে গেছে। স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কবরও নদীতে চলে গেছে।
ভাঙনে বসত ঘর হারিয়েছেন একই গ্রামের সেকেন্দার হোসেন, হওয়া বেগম, আউয়ুব আলী, সৈয়দ আলী, বেলায়েত হোসেন, তৈয়ব আলী শেখ, জাফর শেখ প্রমুখ। তিন-চারবার বাড়িঘর সরিয়েও মধুমতির আগ্রাসী ভাঙন থেকে রেহাই মেলেনি তাদের। এখন জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধে সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার পারভেজ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দ্রুতই ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধের বাইরের রিং বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ নজরুল ইসলাম বলেন, বেড়িবাঁধের বাইরে রিং বাঁধে ভাঙনের কারণে জোয়ারের সময় ভৈরব নদের পানি ওভার ফ্লো হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। বাঁধটি সংস্কারে কাজ শুরু হয়েছে। জোয়ারে ভৈরব নদে পানির অস্বাভাবিক চাপে প্লাবিত হচ্ছে বাগেরহাট শহরের নিম্নাঞ্চল।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইনদ্দীন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, জেলার ৩৬/১ পোল্ডারে বাঁধ মেরামত ও উন্নয়ন করতে চলতি অর্থবছরে একনেকে একটি পুনর্বাসন প্রকল্প অনুমদন পেয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৮২ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ওই এলাকার ভাঙন রোধ সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
অন্যদিকে, জেলোর বলেশ্বর নদী তীরবর্তী শরণখোলা উপজেলায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৩৫/৩ পোল্ডারে টেকসই বাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান আছে। এসব বাঁধের কাজ শেষ হলে জেলার নদী তীরবর্তী জনপদ সুরক্ষিত হবে।
এইচ/এসআই/বিআই/০৮ আগস্ট, ২০১৬