• মাসুমা রুনা
আবারও ঈদ এসে গেল। এতদিন জেনেছি ঈদ মানেই আনন্দ। কিন্তু ঈদ এর পরদিন থেকেই পত্রিকার পাতা আর আশেপাশে চোখ কান খোলা রাখলেই দেখা যায় ঈদ মানে আতংক!
ইদানিং ঈদ মানেই অনেক দিয়েও সন্তান কে তৃপ্ত না করতে পারা! ঈদ মানেই বাবা মা এর অভাবের সংসার টা আরও দুই পা পিছিয়ে পড়া।
ঈদ আসার কয়েক দিন আগে থেকেই দেখা যায় দেশের নানা জায়গায় ঈদ এর পোশাক নিয়ে পারিবারিক অশান্তি। সাধ্যের বাইরে গিয়ে সন্তানদের আবদার পূরণ করতে বাধ্য হতে হয় অনেক অপারগ বাবা মাকে। এরকম অনেক পরিবার ও আছে যেখানে বাবার মাসিক বেতন দশ হাজার টাকা। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে তার তিন সন্তানকে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার জামা কাপড় কিনে দিতে হচ্ছে। বাকি চার হাজার টাকা দিয়ে সে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ঈদ পার করবে, মাস চালাবে।
এরকম আতঙ্কময় ঈদ মধ্যবিত্ত পরিবারে সবচেয়ে বেশি আসে। এখন একটার জায়গায় দুইটা/তিনটা পোশাক, জুতা, দামী মোবাইল না হলে বন্ধু মহলে মুখ দেখানো যেন মুশকিল! ধার-দেনা করে হলেও অনেক বাবা-মা এসব দেন কিন্তু এত কিছুর পরেও কোথায় যেন অতৃপ্তি টা তাদের থেকেই যায়।
কিন্তু কেন?
এইসব আজাইরা যুক্তি তাদের কে শিখাইল যে – “ দুই /তিনটা জামা না হইলে ঈদ হয় না!”
ইদানিং তো আবার সিরিয়ালে দেখা নায়িকার পোশাক না পেলে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ ও বেছে নেয়!
কি ভিয়াবহ! ভাবতেই গা শিউড়ে ওঠে!
ঈদের সকালে এক দিকে কন্যা মেকাপ করছে, ছেলে ফেডজিন্স পরে আয়নায় তাকিয়ে হট লুক দেয় সেলফি তলে! আর অন্যদিকে তার জনম দুঃখি মা রান্নাঘরে গিয়ে চোখের পানি ফেলে।
কি অন্যায় !!!
এখন একটাই চাওয়া, সেই সহজ দিনগুলো ফিরে আসুক, যখন আমরা বছরে দুই ঈদে দুটো জামা পেয়েই খুশিতে রাতে ঘুমাতে পারতাম না ঠিকমত।
বন্ধ হোক স্টার জলসা, যা শিখায় চোখ ঝলসানো কৃত্রিম সাজ, নানা রকম কুটচাল আর শিখায় প্যাচ আর প্যাচ !
সেই সময় টা আবার আসুক যখন ঈদের জামা লুকিয়ে রাখার প্রচলন ছিল, আর ছিল নতুন জামার গন্ধ শুকে আবেশে চোখ বুজে আসার সুখ!
সবাই মিলে হাসিখুশি ভাবেই পার করি প্রত্যেকটা ঈদ।
আমাদের যেসব বাবা মা এরা সন্তান দের মধ্যে আত্মতৃপ্তি দেখতে চান তাদেরকে অনুরধ। দয়া করে অঢেল থাকলেই অধেল ভাবে দিয়ে তাদের অভ্যাস তাকে নষ্ট করবেন না। সন্তান তো আপনারই ! যে ছাঁচে গড়বেন ঠিক তেমনই হবে।
দিন না, অভ্যাস টা আস্তে আস্তে বদলে! ফিরিয়ে আনুন না আমাদের সেই আনন্দের ঈদ! যা ছিল সত্যিকারের আনন্দের।