• মেহেদী হাসান সোহেল
বাঁশের সাথে বাংলার মানুষের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ইংরেজ ফিরিঙ্গিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের নিমিত্তে বাঁশেরকেল্লা তৈরি করেছিল তিতুমির। দেশ স্বাধীন হল হতভাগ্য বাঙালীর কপালে কিছুই জুটলো না। এমন স্বাধীনতা পেলাম যে নিজের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারও হারিয়ে ফেললাম।
আবার শুরু হল আন্দোলন। যা পরবর্তীতে রূপ নিল স্বাধিকার আন্দোলনে। নেতা আসলেন, মঞ্চে দাঁড়ালেন, সামনে জনসমুদ্র, গগনভেদী আওয়াজে প্রকম্পিত হচ্ছিল রেসকোর্স ময়দান। এবার নেতা পাঠ করলেন বাঙালী বাঙালি শত বছরের আকাঙ্ক্ষার বানী, মুক্তির বানী। বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ল হাতে বাঁশের লাঠি নিয়ে। দেশ স্বাধীন হল কিন্তু মুক্ত হতে পারলো না বাঙালি।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হল দ্বিধা বিভক্ত। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ঘাতকরা হত্যা করল বাংলার মহানায়ককে। তারপর শুরু হল পাকিদোসর আর সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন। তাদেরকে যত দিনে বিতাড়িত করলাম ততদিনে এদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্বাধীনতা বিরোধীরা ঢুকে গেছে। তাই তারা আবার ক্ষমতায় আসে কিন্তু পিছনের দরজা দিয়া না একেবারে ভোটের মাধ্যমে মানুষকে উল্লু বানিয়ে। আবার তাদেরকে হঠাতে বাঙালি হাতে তুলে নিল ‘লগি’ মানে ‘বাঁশ’। সফল হল কিন্তু মুক্তি মিলল না।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ক্ষমতায় আসল স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। বিচার হল যুদ্ধাপরাধীদের অনেক চড়াই উতরাই এর মাঝে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে দেশ। এইভাবে উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকলে বছর পাঁচেক এর মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশের পরিণত হবে। কিন্ত ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আজো আমাদের মুক্তিকামী মানুষ তার জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে আততায়ীর হাতে। স্বামী হচ্ছে স্ত্রী হারা, সন্তান হচ্ছে মাতৃহারা, স্ত্রী হচ্ছে স্বামী হারা আর সন্তান হচ্ছে পিতৃহারা, মা-বাবা, ভাই- বোনের আহাজারিতে বাংলার আকাশ ভারী হচ্ছে।
পুলিশ বাহিনী আমাদের সুরক্ষা দিতে পারছে না, এই সেই পুলিশ বাহিনী যারা ৭১’এ প্রথম পাকসেনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিল। আজ তারাই অসহায়।
তাই তারা জনতার সাহায্য চাইছে, দেশের সাধারণ মানুষের নিরপত্তা দেবার জন্য। হাতে তুলে দিয়েছে বাঁশ। স্বাধীনতার পর কুখ্যাত রাজাকারের পশ্চাৎদেশে বাঁশ দিয়ে হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছিল।
আজ স্বাধীন দেশ জনগনের হাতে বাশ তুলে দিয়েছে যখন কিনা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় এবং চারিদিকে তাদের জয়জয়কার। তাই মনের এক অজানা উৎকণ্ঠা কাজ করে চারদিকে যারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবি করে ভারত নৃত্য করছে তারা স্বাধীনতা বিরোধী মুখোশধারী নয়তো।