সুন্দরবনে আগুন দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ৬ জনকে সনাক্ত করেছে বন বিভাগ। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।
সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার্থে বনের নাংলি বিল এলাকায় বুধবার (১৩ এপ্রিল) আগুন দেওয়া হয়েছিল এমন অভিযোগে ১৯২৭ সালের বন আইনের ২৬ এর ১ক (গ) ধারায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনে আগুন লাগার সর্বশেষ ঘটনা ইচ্ছাকৃত এবং উদ্দেশ্য পূর্ণ হিসাবে প্রমান পেয়েছে বন বিভাগ। আগুন দেওয়ার ‘সুনিদৃষ্ট’ অভিযোগে ৬ জনকে চিহ্নিত করে বন আইনে মামলা হচ্ছে।
মামালার সমস্ত কাগজ পত্র তৈরি থাকলেও আদালত ছুটি থাকায় তা দাখিল করা যায় নি। রোববার (১৭ এপ্রিল) আদালতে মামলাটি দাখিল করা হবে। মামলার বাদি হচ্ছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগরে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) সুলতান মাহমুদ টিটু।
ইতিপূর্বে সুন্দরবনে বহুবার আগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও কখনও মামলা বা সুনিদৃষ্ট কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
এ প্রশ্নের জবাবে ডিএফও বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বন বিভাগ যাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে তারা ‘ব্যক্তি স্বার্থে’ বনে আগুন দিয়েছে। তবে তা বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার্থে কি না তা তিনি স্পষ্ট করেন নি।
তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে তারা সবাই সব সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার্থেই তারা বনে আগুন দেয়। মামলার প্রধান আসামির বাড়িও বন সংলগ্ন বাগেরহাটে শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের ভোলা নদীর পাড়ে।
এদিকে বুধবার দিন ভর জ্বলা আগুনে সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ক্যাম্প এলাকায় লাগা আগুনে বনের ৮ দশমিক ৫৫ একর বনাঞ্চল পুড়ে গেছে।
অভিযোগ আছে, বর্ষা মৌসুমে বনের ভেতর মাছ ধরার সুবিধার্থে প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে সুন্দরবনের এই এলাকায় আগুন দেওয়া হয়ে। এর সাথে জাড়িত স্থানীয় প্রভাবশালী ও বন বিভাগের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারি।
বনবিভাগের ধানসাগর স্টেশন (এসও) কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটু বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, জিপিএস ডিভাইজের মাধ্যমে বন বিভাগ হিসাব করে দেখেছে আগুনে বনের নাংলি ক্যাম্পের আব্দুল্লার ছিলা, পঁচাপুড়ালিয়া ও নাপিতখালি এলাকায় ৮ দশমিক ৫৫ একর বনভূমি পুড়ে গেছে।
আগুন লাগার প্রায় ১২ ঘন্টা পর বুধবার রাতে তা নিয়ন্ত্রনে আসে। নতুন করে ওই এলাকায় যেন আর আগুন লাগতে না পারে এজন্য বৃহস্পতিবারও বন বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস ওই এলাকায় পানি ছিটায়।
কোথাও কোন ধোঁয়া দেখা গেলে সেখানে পানি দেওয়া হচ্ছে। আগামী দুই তিনদিন ওই এলাকা সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষনে রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
বুধবার আগুন লাগার ওই ঘটনার মাত্র ১৭ দিন আগে নাংলি ক্যাম্প এলাকায় লাগা আগুনে প্রায় এক একর বনভূমি পুড়ে যায়।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সুন্দরবনে প্রথম অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে ২০০২ সালের ২২ মার্চ। এর পর থেকে গেল ১৪ বছরে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় অন্তত্য ২০ বার আগুন লেগেছে। এতে ৬০ একরেরও বেশি বনাঞ্চল পুড়ে যায়।
এসব অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সুন্দরী, গরান, গেওয়া, বাইন, সিংড়াসহ অনেক মূল্যবান গাছ পুড়ে যায়।
এর মধ্যে সুন্দরবন পূব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন এলাকায়ই গত ১২ বছরে অন্তত্য ১৪টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৪০ একর বনভূমি। তবে স্থানীয়দের হিসাবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বনের পরিমাণ আরো বেশি।