সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ক্যাম্প এলাকায় সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে বনবিভাগ জানিয়েছে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ।
রোবাবার সন্ধ্যা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সোমবার সকালে তা আরও ছড়িয়ে পড়লে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে যোগ দেয়। তাদের সহায়তা করেন বনবিভাগের কর্মীরা।
সোমবার দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, আগুন এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নতুন করে কোথাও আর ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে না। তারপরও আমরা আগুন লাগার এলাকা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
যে এলাকায় আগুন লেগেছে সেখানে ফয়ার লাইন (দীর্ঘ গর্ত) কেটে দেওয়া হয়েছে। সুতারাং আগুন আর নতুন এলাকায় বিস্তৃতি লাভ করতে পারবে না বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সুন্দবনের যে এলাকায় আগুন লেগেছে সেখানে বনের তেমন কোনো মূল্যবান গাছপালা নেই। প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে এখানে লতাগুল্ম প্রজাতির কিছু গাছ রয়েছে, যেগুলো ‘বলা গাছ’ নামে পরিচিত।
“বেশকিছু বলা গাছ পুড়ে গেছে।”
ঘটনা তদন্তে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বলেও ডিএফও সাইদুল ইসলাম জানান।
“তদন্ত কমিটিকে আগুন লাগার কারণ, আগুনে বনজ সম্পদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং কত বনভূমি পুড়েছে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) গাজী মতিয়ার রহমান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) সুলতান মাহমুদ।
ধানসাগর স্টেশনের এসও সুলতান মাহমুদ বলেন, রোববার সন্ধ্যায় বনকর্মীরা প্রথম আগুনের ধোঁয়া দেখতে পান। এরপর তারা সেখানে গিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভান। কিন্তু সোমবার সকালে সেখানে আবার ধোঁয়া দেখা গেলে মোরেলগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশের নিচু এলাকায় বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্ম শুরুর মৌসুমে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
এ সময় তীব্র বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে; নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়।
২০১৪ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের গুলিশাখালী ক্যাম্পসংলগ্ন পয়ষট্টি ছিলা এলাকায় বনে আগুন লেগে অন্তত পাঁচ একর বনভূমি পুড়ে যায়। ২০১১ সালে ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ক্যাম্প এলাকায় পোড়ে দুই একর বনভূমি।
সুলতান বলেন, “এ মৌসুমে মৌয়ালরা মধু আহরণ করতে বনে আসে। চাক ভাঙার সময় তারা আগুন ব্যবহার করে। সেখান থেকেও বনে আগুন ছড়িয়ে থাকতে পারে।”
অবশ্য বনের মধ্যে পচা পাতা থেকে তৈরি হওয়া মিথেনের স্তর জমে গেলে বনজীবীদের বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকেও আগুন লাগার সুযোগ থাকে।
** সুন্দরবনে আগুন