সুন্দরবনের উপর ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করতে এসে বিপাকে পড়েছেন তিন ফরাসি সাংবাদিক। তাদের ব্যবহৃত ক্যামেরা সংযুক্ত একটি ড্রোন এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আটকে রেখেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের দাবি, তাদের অনুমতি না নিয়ে বনের অভয়ারণ্যে ড্রোন উড়ানোর অভিযোগে ওই যন্ত্রটি জব্দ করা হয়।
ফ্রান্সের ‘এআরটিই’ টেলিভিশনে কর্মরত গাই কিউসি, টিমো এভাম্যান ও নাসিম এলমাউনের কাছ থেকে ৩১ জানুয়ারি ড্রোনটি আটক করে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ। তবে ঘটনার পর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পার হলেও সোমবার পর্যন্ত ড্রোনটি তাদের ফেরত দেওয়া বা কোন প্রকার মামলা দায়ের করেনি বন বিভাগ কর্তিপক্ষ।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, পাগমার্ক টুরস্ এন্ড ট্রাভেল্স কোম্পানীর ‘এম এল বাওয়ালী’ নামে একটি লঞ্চে করে ফ্রান্সের ‘এআরটিই’ টেলিভিশনের ওই সাংবাদিকরা সুন্দরবনে আসেন। ৩১ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে তারা পূর্ব সুন্দরবনের কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের কাছের কটকা টাওয়ারের খালের পূর্ব প্রান্তে ক্যামেরাসহ একটি ড্রোন উঠান।
ছোট আকৃতির ক্যামেরা বহণ করতে সক্ষম ‘ডিজেআই’ কোম্পানীর ওই ড্রোনটি (ফ্লাইং ক্যামেরা) বন বিভাগের নজরে আসলে তারা যন্ত্রটিকে (যার মডেল নং- পি-৩৩০জেড, সিরিয়াল নাম্বার পিএলএল-৬৩৬১৫৪১২৬) নিচে নামিয়ে আনতে বাধ্য করে। এসময় কটকা অভয়ারণ্যে কর্মকর্তা ফরেষ্ট রেঞ্জের শাহ নোমান তাদের কাছে ড্রোনটি ওড়ানোর কারণ জানতে চাইলে তাদের নিজেদের পরিচয় দেন। পরে ডকুমেন্টারী তৈরির কথা জানালে ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি না নেওয়ার দায়ে একটি ব্যাটারীসহ রিমোট কন্ট্রোল ওই ড্রোনটি (ফ্লাইং ক্যামেরা) জব্দ করে বন বিভাগ।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ( এসিএফ) কামাল উদ্দিন আহমেদ ড্রোনটি জব্দ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
অন্যদিকে, পাগমার্ক টুরস্ এন্ড ট্রাভেল্স কোম্পানীর সত্বাধীকারী নজরুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে অবহিত করে সুন্দরবন নিয়ে ডকুমেন্টারী তৈরির উদ্যেশে ফ্রান্সের ওই সাংবাদিকরা তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য বাংলাদেশে আসে। সুন্দরবন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সে দেশের ‘এআরটিই’ টেলিভিশনে প্রচারের জন্য একটি ডমুমেন্টারী তৈরির কাজ করছিল তারা।
বাংলাদেশের সুন্দরবনসহ বিশ্বের মোট ৫টি বনের উপর এধরনের ডকুমেন্টারি তৈরি করছেন তারা।
নজরুল ইসলাম বাচ্চু আরো বলেন, বাংলাদেশের সুন্দরবন নিয়ে কাজ করার জন্য প্রায় তিন মাস আগে থেকে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, কাস্টম, তথ্য এবং বন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের অণুমতি নিয়ে তাদের সাথে থাকা সকল মালামালের কাগজ পত্র কাস্টম-এ জমা দিয়েই তারা সুন্দরবন প্রবেশ করে।
গত ২৮ জানুয়ারি সুন্দরবনে প্রবেশের আগে বন বিভাগের নির্ধারিত সকল প্রকার ফি এবং রাজস্ব পরিশোধ করার পরই সুন্দরবন যাত্রা করের ওই সাংবাদিকরা।
এ ধরনের বিড়ম্বনা বিদেশী পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি করবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সুন্দরবন ভ্রমণের নীতিমালায় ড্রোন উঠাবার বিষয়ে আলাদা করে কিছু বলা না থাকায় বিদেশী ওই সাংবাদিকরা বন বিভাগকে পৃথক ভাবে বিষয়টি জানানোর প্রয়োজন মনে করেন নি। তাছাড়া স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অনুমতি থাকার পরও আলাদা ভাবে বেসাকরিক বিমান চলাচল কর্তিপক্ষেও যে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে বুঝতে পারেন নি।
ডকুমেন্টারীর পুরো স্ক্রিপ্ট তথ্য অধিদপ্তরে আগে থেকে প্রদান করে অনুমতি নেওয়ার পাশাপাশি তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরেরও এক জন কর্মকর্তা ছিলেন। এসব নিয়ম পালনের পরও এ ধরনের ঘটনা টুরিজম শিল্পের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, ড্রোনটির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ বাগেরহাটের পুলিশ সুপার এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়কে অবহিত করে। তাদের মাধ্যমে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে বিষয়টি জানানো হলে ড্রোনটি ফ্রান্সের ওই সাংবাদিকদের ফেরত দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্ল্যা বলেন, ড্রোনের ওই ঘটনাটি বন বিভাগের। তারা কোন মামলা দায়ের করেনি বা পুলিশের কাছে হস্তান্তরও করেনি। পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে তারাই ভালো বলতে পারবেন।
তবে এ বিষয়ে জানাতে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলামের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।