বাগেরহাটের ফকিরহাটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার নিয়ামত হোসেনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবি’র (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) দুই সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বাগেরহাটের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ও ফকিরহাট আমলী আদালতের বিচার জিয়ারুল ইসলাম গত ৫ জানুয়ারি এ পরোয়ানা জারি করেন।
পরোয়ানাভূক্ত আসামিরা হলেন- বাগেরহাটের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুল ইসলাম, বিজিবির তৎকালীন ৩৪ ব্যাটালিয়নের হাবিলদার মামুন আলী (রেজি নং ৫২১৬৬) ও সিপাহী বাবুল হোসেন (রেজি নং ৫০৩০০৪)।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কালেক্টরেটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে, হাবিলদার মামুন আলী তার সাবেক কর্মস্থলে এবং সিপাহী বাবুল হোসেন বর্তমানে বিজিবি ৩০ ব্যাটালিয়নে কর্মরত রয়েছেন বলে এই মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় বাগেরহাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে বিজিবির ১২-১৪ সদস্যের একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স সেখানে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছিলো। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সরদার নিয়ামত হোসেন (৫৬)।
মামলার নথি ও আদালত সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন চলাকালে উপজেলার সাতসিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম এবং তার নির্দেশে বিজিবি সদস্যরা সরদার নিয়ামতকে আটক করে রাইফেল দিয়ে বেদম প্রহার করে। গুরুতর আহতাবস্থায় ওই ম্যাজিস্ট্রেট তাকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় বিজিবির পিকআপ ভ্যানে ফেলে রাখেন এবং পরে ফকিরহাট থানায় নিয়ে আটকে রাখেন।
পরে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে তাকে ওইদিন দুপুরে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ১২ মার্চ শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে খুলনার একটি ক্লিনিকে এবং ১৫ মার্চ হেলিকপ্টারে করে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ মার্চ সকালে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই প্রহারজনিত কারণেই তার মৃত্যু হয়েছিলো। তার পায়ের হাঁটু ও গোড়ালিতে জখম হয়েছিলো এবং পেট, বুক, কাঁধসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ও ফোলা জখম হয়েছিলো।
সরদার নিয়ামত হোসেনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসব বিষয়সহ ঘটনাটিকে সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ড. একে আজাদ ফিরোজ টিপু জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সরদার নিয়ামত হোসেন ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৪ সালের ৫ মার্চ তার উপর হামলা, মারধর, হত্যার চেষ্টা, তার কাছে থাকা টাকা আত্মসাৎ ইত্যাদি অভিযোগে ওই ম্যাজিস্ট্রেট ও তার নেতৃত্বাধীন অজ্ঞাতনামা বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে ফকিরহাট আমলী আদালতে একটি সিআর মামলা (৩৪/১৪) দায়ের করেন।
ফকিরহাট আমলী আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও তৎকালীন মূখ্য বিচারিক হাকিম আবু তাহের অভিযোগটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন। ওই তদন্ত চলাকালে সরদার নিয়ামত হোসেন মারা গেলে ২০১৪ সালের ১২ জুন মামলাটি আইনানুগভাবে হত্যা মামলায় রূপান্তরসহ নিহতের স্ত্রী নূরানী আসমাকে মামলার বাদী নির্ধারণ করা হয়। বিচার বিভাগীয় তদন্তের সময় সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমগণ মোট ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
অ্যাডভোকেট ড. একে আজাদ ফিরোজ টিপু বলেন, ৫ জানুয়ারি বাদীপক্ষ সুনির্দিষ্টভাবে ওই ম্যাজিস্ট্রেট ও দু’জন বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে সরদার নিয়ামত হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ এনে মামলাটি আমলে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত ওই তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৌঁছেছে কি না- তা জানতে একাধিকবার সেখানকার পুলিশ সুপার বশির আহম্মদের মোবাইল ফোনে করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।