সুন্দরবন সংলগ্ন পশুর নদীতে ডুবে যাওয়া কয়লাবাহী কার্গো জাহাজ `এমভি জি আর রাজ’ এখনো উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনায় মামলা করেছে বন বিভাগ।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের পক্ষ থেকে মংলা থানায় জাহাজের মালিক ও মাস্টারের বিরুদ্ধে ওই মামলা দায়ের করা হয়। যাতে এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে বন বিভাগ।
এর আগে কার্গো ডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে বন বিভাগের পক্ষ থেকে দুপুরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাঈদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, কার্গোডুবির ঘটনায় চাঁদপাই স্টেশনের মিজানুর রহমান বাদী হয়ে কার্গো মালিক ও মাস্টারের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছেন।
পাশাপাশি কার্গো ডুবির ঘটনায় বনের উপর প্রভাব ও প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান ডিএফও।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- চাঁদপাই রেঞ্জের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা গাজী মতিয়ার রহমান ও ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান।
এদিকে ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক কার্গো মাস্টার বুলু কাজীকে বন বিভাগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে মংলা থানার ওসি শেখ লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে সুন্দরবনের পাশে মংলা সাইলো (খাদ্য গুদাম) সংলগ্ন বিউটি মার্কেট এলাকায় পশুর নদীতে এমভি জি আর রাজ নামের ওই কার্গো জাহাজটি তলা ফেটে ডুবে যায়। মংলা বন্দরের হারবাড়িয়া-৩ থেকে ৫১০ টন কয়লা নিয়ে যশোরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল জলযানটি।
কার্গোর মালিক পক্ষ বলছে, মঙ্গলবার বিকালে জাহাজটি জয়মনি এলাকায় ডুবোচরে আটকে পড়ে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে জোয়ারের সময় ডুবোচর থেকে কার্গো সরানোর সময় তলা ফেটে জাহাজটি ডুবে যায়।
এ সময় মাস্টার ও নাবিকসহ কার্গোর ১০ কর্মচরি সাঁতরে তীরে ওঠতে সক্ষম হন।
বুধবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও মো. সাঈদুল ইসলাম ও মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ আলী প্রিন্সসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার হাসান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, “কয়লা বোঝাই কার্গোটি পশুর চ্যানেলে জাহাজ চলাচল এলাকার বাইরে ডুবেছে। তাই বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে না। দ্রুত জাহাজটি সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
ডুবে যাওয়া কার্গো-এর মানিক মো. দিল খান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার থেকে জাহাজটি উদ্ধারে কাজ শুরু করবে। উদ্ধার কাছে বন্দর কতৃপক্ষ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।’
পশুর নদীর পশ্চিম পাড়ে রামপাল উপজেলার সাপমারি-কাটাখালী এলাকায় কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতায় কয়েকটি সংগঠনের আন্দোলনের মধ্যেই কার্গোডুবির এ ঘটনা ঘটল।
সুন্দরবন সংলগ্ন এই এলাকায় কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বিরোধিতাকারীরা কয়লা বোঝাই কার্গো বার্জডুবির এই ঘটনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, “এ ঘটনাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব পড়বেই।”
‘আগামীতে রামপালে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই নৌ-পথে কয়লা পরিবহন বহুগুণ বাড়বে। তখন এ ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়বে। আমরা পুরো বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
সেভ দ্যা সুন্দরবন চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই কয়লাবাহী জাহাজডুবি আমাদের জন্য একটা সর্তক বার্তা। রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি বছর পাঁচশতাধিক জাহাজ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে চলাচল করবে।’
‘দিন-রাত ২৪ ঘন্টা বনের ভেতর দিয়ে এভাবে জাহাজ চলাচলে নদীতে কয়লা, তেল-মবিল ও বর্জ্য পড়বে, নৌযানের হর্ণের শব্দ, রাতে সার্চ লাইটের আলো প্রাণীকুলের অভয় অরন্য নষ্ট করবে।’