সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের লোনা পানির কুমির ‘পিলপিলে’র ডিম থেকে ৩৭টি কুমির ছানা জন্ম নিয়েছে।
সোমবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্রের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ডিম ফুটে একে একে ৩৭টি কুমির ছানা জন্ম নেয়।
এ নিয়ে গত ১৯ দিনে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির ‘পিলপিল’ ও ‘জুলিয়েটে’র ডিম থেকে ৭৩টি ছানার জন্ম হলো।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ফরেস্টার ও করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত সহকারী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, চলতি বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে প্রজজন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে ৬১টি ডিম দেয় পিলপিল। পরে পুকুর পাড় থেকে ডিমগুলো সংগ্রহ করে ইনকিউবেটরের (ডিম থেকে ছানা ফুটানোর যন্ত্রে) রাখা হয়।
সেখানে দীর্ঘ ৮৫ দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বায়ু ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে থাকার পর সোমবার ডিমগুলো ফুটে ছানাগুলো বের হয়।
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল নিয়োগ করা হলে ডিম থেকে শতভাগ ছানা ফুটানো সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, প্রজনন কেন্দ্রে ছানা ফুটানোর যন্ত্র চালাতে জেনারেটরের তেল সংকট ও দুর্বল সোলার ব্যবস্থার কারণে এ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
কেন্দ্রের কর্মচারী জাকির হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রায় ৩ মাস থাকার পর সোমবার ডিম ফুটে ছানা বের হয়েছে। তবে ভ্রুণ দুর্বল ও নষ্ট হওয়ায় ২৪টি ডিম থেকে ছানা হয়নি।
তৌহিদুর রহমান আরও জানান, এর আগে গত ১৯ মে এই প্রজনন কেন্দ্রের অপর নারী কুমির জুলিয়েট ৫১টি ডিম দেয়। ওই ডিমের মধ্য থেকে একই নিয়মে গত ৫ আগস্ট ৩৬টি ছানার জন্ম হয়।
ভ্রুণের মৃত্যু ও অনিষিক্ত হওয়ার কারণে জুলিয়েটের ১৫টি ডিম নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে ওই ৩৬টি কুমির ছানা সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।
আগমী ৩৬ ঘণ্টা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখার পর মঙ্গলবার কুমির পিলপিলের ছানাগুলো প্রজনন কেন্দ্রের প্যানে লালন-পালনের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান করমজল কেন্দ্রের এই কর্মকর্তা।
কেন্দ্রের সাবেক কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ আবদুর রব জানান, বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘড়িয়াল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়ালের বিলুপ্তি ঘটেছে। এখন শুধু লবণ পানির কুমিরের অস্তিত্বই আছে। এরা সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে।
|| সুন্দরবনের ‘করমজল’ কুমির প্রজনন ও লালন পালন কেন্দ্র
দেশে লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য সুন্দরবনস বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে ৮ একর জমির ওপর বনবিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি এই কুমির প্রজনন কেন্দ্র।
ওই বছর সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে জেলেদের জালে আটকা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি লোনা পানির কুমির নিয়ে কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। রোমিও-জুলিয়েটের বয়স এখন প্রায় ২৫ বছর। এই জুটি প্রজননক্ষম হয় ২০০৫ সালে।
জুলিয়েট আকারে রোমিওর চেয়ে সামান্য ছোট। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এই কেন্দ্রটি তত্ত্বাবধানে ছিলেন অষ্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সেন্টারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন বন কর্মকর্তা।
তিনি অবসরে যাওয়ার পর কোনো কুমির বিশেষজ্ঞ নেই এ কেন্দ্রে। ২০০২ সাল থেকে তার সহকারী হিসেবে এই কেন্দ্রে কাজ করে আসছেন বেশ কয়েক জন। তারাই এখন সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করেন।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্য মতে, জুলিয়েট এ পর্যন্ত ডিম দিয়েছে মোট ৫৩২টি। সেখান থেকে ৩২০টি ছানার জন্ম হয়েছে।
করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের আরেক নারী সদস্য পিলপিল। এখন পর্যন্ত সে ডিম দিয়েছে ১০৫টি, যা থেকে ৭০টি ছানা জন্ম নিয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, লোনা পানির এই প্রজাতির কুমির ৮০ থেকে ১০০ বছর বাঁচে।
এই কেন্দ্র থেকে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগ ও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে অবমুক্ত করার পর বর্তমান ৩৬টি বাচ্চাসহ কেন্দ্রে কুমিরের সংখ্যা ২৩৭টি।
এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলার জ্বলোচ্ছ্বাসে এ কেন্দ্র থেকে ৬১টি কুমির ভেসে চলে যায়।