টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটের মংলা পোর্ট পৌরসভার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে প্রথম শ্রেণীর এই পৌরসভার অধিবাসীরা।
প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে পৌরসভার সড়ক ও ড্রেন কাম ফুটপাথ নির্মাণ কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হলে কাজ শেষ হয়নি। ফলে সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু এর পরও কাজ চলছে ধীরগতিতে।
এতে করে বর্ধিত সময়ের মধ্যেও এ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ আর অসন্তোষ বিরাজ করছে পৌরবাসীর মধ্যে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে শহরের অধিকাংশ সড়কই এখন চাষ দেওয়া ধান ক্ষেতে পরিনত হয়েছে। পৌরবাসীকে পানি আর কাঁদা-মাটির মধ্যে দারুণ ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
এদিকে, পুরো শহরের সড়কগুলোর বেহাল দশার কারণে আসন্ন ঈদ বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। সড়কের ভগ্ন দশার কারণে ব্যবসায়ীরা তেমন বিচিকিনি করতে পারছে না।
জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে প্রথম শ্রেণীর মংলা পোর্ট পৌরসভার প্রধান প্রধান কয়েকটি সড়ক ও সড়কের পার্শ্বে ড্রেন কাম ফুটপাথ নির্মাণের লক্ষে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয় পৌরসভা। প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পগুলোর কাজ এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে কাজ চলতে থাকে অত্যন্ত ধীরগতিতে।
এক বছরের নির্ধারিত সময় পার হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে অতিরিক্ত আরো তিন মাস সময় বর্ধিত করিয়ে নেয়। এ অতিরিক্ত সময়ের ইতিমধ্যে এক মাস সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু কাজ চলছে ধীরগতিতেই, যেনতেন ভাবে। এ অবস্থায় বর্ধিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
শহরের প্রধান প্রধান সড়কের মধ্যে শেখ আঃ হাই সড়ক, বিএলএস রোড়, মাদ্রাসা রোড়, শ্রমিক সংঘ সড়ক, হাজী বাহার উদ্দিন সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক সংলগ্ন ড্রেন কাম ফুটপাথ নির্মাণ কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। এসব নির্মাণ কাজ বর্ষার আগে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে তা নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি।
এদিকে এমন অবস্থায় পৌরবাসীকে সড়কে চলাচলে দায় হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা। সড়কের নানা জায়গায় নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে যত্রত ভাবে। পুরোপুরি শেষ হয়নি সড়কের দু’পাশে ড্রেন কাম ফুটপাথ নির্মাণের কাজও।
অন্যদিকে, এসব কাজ করতে গিয়ে ব্যাপক খোড়াখুড়ি করায় পুরো শহরের সড়ক জুড়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের।আবার কবে নাগাদ এসব সড়কে ঢালাই কাজ সম্পন্ন করা হবে তা নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা।
এ অবস্থায় বর্ষায় রাস্তায় পানি জমে চলাচলে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। কাদার মধ্যে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা। অফিসগামি লোকেরা কদমাক্ত রাস্তায় পড়ে গিয়ে নানাভাবে আহত হচ্ছেন। রিকশা, ভ্যান এমনকি পায় হেটে চলাচলও এখন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।
মংলা পৌরসভা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষের চরম খামখেয়ালীপনার দরুণ বর্ষার আগে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সড়ক নির্মাণ করা যায়নি। এ অবস্থায় শহরের যানবাহন চালক থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকরা পর্যন্ত চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
এদিকে পুরো শহরের সড়কগুলোর বেহাল দশার কারণে এর প্রভাব পড়েছে আসন্ন ঈদ বাজারে। শহরের বাজার এলাকায় রান্তার করুণ অবস্থার কারণে পোষাক, জুতাসহ বিভিন্ন দোকান ও টেইলার্সগুলোতে কোন ক্রেতা ও অর্ডার নেই। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা এবারের ঈদ বাজার নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
মংলা বন্দর বণিক সমিতির সভাপতি হাবিব মাষ্টার এ ব্যাপারে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে সড়কের দুরাবস্থায় এবারের ঈদে ব্যবসায়ীরা তেমন বিচিকিনি করতে পারছে না। এতে করে ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের টাকার লোকসান গুনবে।
মংলা নাগরিক সমাজের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ নূর আলম পুরো শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঠিকাদারসহ পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও তদারকির অভাবে জন ভোগান্তি এখন চরম আকার ধারণ করেছে। তিনি এ নির্মাণ কাজে ব্যাপক স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে মংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র জুলফিকার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্ধিত সময়ের মধ্যেই যাতে নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ করা হয় তার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যাপক তদারকি করছে। এর পরেও যদি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদেরকে জরিমানা গুনতে হবে।