রয়েল বেঙ্গল টাইগারের (বাঘের) পর বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে কুমির গণনাও শেষের পথে। চলতি জুন মাসই শেষ হচ্ছে এই শুমারি।
বন বিভাগের সহযোগিতায় ‘ক্যারিনাম’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এই সমীক্ষার কাজ করছে। সুন্দরবনের নদী-খালে ভাসমান নৌযানে করে ১০ জন করে দলে বিভক্ত হয়ে তারা কুমির গণনা করছেন।
গণনার অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনের ছোট-বড় ৪৫০টি নদী ও খালে কুমির সমীক্ষা করছে দলটি। চলতি মাসের শেষ নাগাদ যা শেষ হতে পারে বলে আশা বনবিভাগের।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, গত বছরের ৭ এপ্রিল থেকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ক্যারিনাম বন বিভাগের সহায়তায় কুমির শুমারি শুরু করেছে। চলতি জুন মাসের শেষ নাগাদ এই শুমারি শেষ হবার কথা রয়েছে।
সমীক্ষার ফলাফলে কুমিরের সংখ্যা, কোথায় কম ও কোথায় বেশি এবং প্রতি কিলোমিটারে কুমিরের ঘনত্বসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য ‘সুন্দরবনস বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন’ প্রকল্পের আওতায় ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে আট একর জমির উপর বনবিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র।
ওই বছর সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে জেলেদের জালে আটকে পড়া ছোট-বড় পাঁচটি লোনা পানির কুমির নিয়ে যাত্রা শুরু হয় করমজল বনপ্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের।
এই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পোল্লাদ চন্দ্র রায় বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, সর্বশেষ ২০০৪ সালের গণনা অনুসারে সুন্দরবনে ১৫০ এর কাছাকাছি কুমির ছিলো। আর করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে বর্তমানে ২২০টি কুমির রয়েছে।
এছাড়া গত মে মাসে ১২ এবং ২৮ তারিখে এই কেন্দ্রের কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল ৫০টি এবং ৬১টি ডিম দিয়েছে বলে জানান তিনি।
এক একটি মাদি কুমির বছরে ৬০/৭০টি ডিম পাড়ে।
পোল্লাদ চন্দ্র রায় আরো জানান, পুরুষ জাতের কুমিরের সঙ্গে স্ত্রী জাতের কুমিরের মিলন না হলে ওইসব ডিম থেকে বাচ্চা হয় না। এছাড়া সুন্দরবনের গুইসাপ ও শুকরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণি ডিমগুলো খেয়ে ফেলে। যে কারণে এর প্রজনন বিঘ্নিত হয়ে আসছে।
সুন্দরবনের কুমির সাধারণত বেশি লবণাক্ত পানিতে থাকে। তবে ডিম পাড়ার সময় অপেক্ষাকৃত কম লবণাক্ত পানিতে চলে আসে।
এদিকে, গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়ায় চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে কুমির গণনা শুরু হচ্ছে বলে যে খবর প্রকাশ করা হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বনবিভাগের এক কর্মকর্তা।
পহেলা জুন কুমির গণনা শুরু হচ্ছে বলে খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই সব মিডিয়াগুলো সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) কামাল উদ্দিন আহমেদের উদ্ধৃত করেন।
তবে, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘কুমির গণনার বিষয়ে এর আগে আমার সঙ্গে আর কোন সংবাদিকের কথা হয়নি। কুমির গণনার বিষয়ে আমার জানা নেই। একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে শুনেছি।’
‘এ ব্যাপারে আপনি চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ সাহেবের সাথে কথা বলতে পারেন। তিনি আপনাকে তথ্য দিতে পারবেন।’
এর আগে দুই ধাপে ২০১৩ সালে ‘ক্যামেরা ট্রাপিং’ পদ্ধতিতে (ছবি তোলা) সুন্দরবনে বাঘ গণনা শুরু হয়। গত মার্চ মাসে শেষ হয় এই পদ্ধতিতে বাঘের ছবি সংগ্রহের কাজ।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের (খুলনা) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহিদুল কবীর বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, দুই ধাপে পাওয়া তথ্য উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে চলতি মাসে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হতে পারে।
এছাড়া সুন্দরবনে শিগগিরই হরিণ ও বন্য শুকর শুমারি শুরু হতে পারে বলে জানান তিনি।