চার শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বুধবার রাতে বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেছে।
মামলায় পুলিশের উপর হামলা, পুলিশ আহত করা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ার কথা বলা হয়েছে। এজাহার অনুযায়ী ৬ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ভোরে এই ঘটনা ঘটে।
তবে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে মামলা এজাহারে উল্লেখিত ঘটনাস্থল সদর উপজেলার রণবিজয়পুর এলাকার গিয়ে স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা মেলেনি। আর বিএনপি বলছে, ঐ এলাকায় ঐ সময়ে তাদের দলীয় কোন কর্মসূচিই ছিলো না।
মামলায় এজাহার নামীয় বিএনপির ৩২ নেতা-কর্মীর মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি এম.এ. সালাম, সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাদেম নেয়ামুল নাসির আলাপ ও মাহাবুবুর রহমান টুটুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাফফর রহমান আলম, জেলা যুবদল সভাপতি মেহেবুবুল হক কিশোর, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানু ভূঁইয়া প্রমূখ।
বুধবার (৭ জানুয়ারি) রাতে বাগেরহাট মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিন উদ্দিন বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩), ১৬ (২) ও ২৫ (ঘ) ধারা এবং দন্ড বিধির ১৪৩, ৩৩২, ৩৩৩, ৩০৭, ৩৫৩, ১৮৬, ৪২৭ ও ১১৪ ধারায় ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা তিন-চার শত জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধায় ৭টা পর্যন্ত পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এব্যাপারে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম.এ. সালাম অভিযোগ করে বলেন, ‘৬ জানুয়ারি ভোরে ঐ এলাকায় আমাদের দলীয় কোন কর্মসূচি ছিলো না। তা ছাড়া আমি ঢাকায় রয়েছি। কিন্তু পুলিশ বলছে আমার নেতৃত্বে ঐ ঘটনা ঘটেছে।’
‘আসলে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ভয় পেয়ে পুলিশ এভাবে মিথ্যা মামলা করছে। তারা (পুলিশ) এধরণের আরও মামলা করবে।’
বাদী তার এজাহারে বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে গত ৬ জানুয়ারি ভোরে তিনি আইন শৃঙ্খলা ডিউটি করছিলেন। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তিনি খবর পান যে, জেলা বিএনপি সভাপতি এম.এ. সালামের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র নেতা-কর্মীরা পিরোজপুর-খুলনা সড়কে বাগেরহাট সদর উপজেলার রণবিজয়পুর (ব্রাক কার্যালয়ের সামনে) এলাকায় সমবেত হয়েছেন।
তারা গাছের গুড়ি, কলাগাছ লোহার গ্রীল ও টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করছেন। এসময় তিনি পুলিশসহ সেখানে উপস্থিত হলে বিএনপি জামায়াতের নেতা-কর্মীরা চারিদিক থেকে তাদের উপর চড়াও হয় এবং ইট ছোড়া শুরু করে। এতে তিনিসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।
এ সময় সরকারী অস্ত্র ও জানমাল রক্ষার্থে কনস্টেবল পরিমল ও বাদশা মিঞা তাদের সরকারি শটগান দিয়ে পাঁচ রাউন্ড করে মোট ১০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে আসামীদের ছত্রভঙ্গ করেন। পরে সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তিনি আহত পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
তবে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এজাহারে উল্লিখিত খুলনা-পিরোজপুর সড়কে ব্র্যাক কার্যালয়টি রণবিজয়পুর গ্রামে না, বাগেরাহট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রণবিজয়পুর, সুন্দরঘোনা, পাটরপাড়া গ্রাম ঘুরে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে ৬ জানুয়ারি ভোরে খুলনা-পিরোজপুর সড়ক সংলগ্ন ঐ সব এলাকায় বিএনপির কোন কর্মসূচি, অবরোধ, পুলিশের উপর হামলা বা গোলাগুলির ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এজাহারে ঘটনাস্থল বলে উল্লেখ করা- ব্র্যাক অফিসের আশেপাশের এলাকার দোকানী ও পার্শ্ববর্তি মহি চেয়ারম্যানের মোড় এলাকায় গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলেও এ ধরণের কোন ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তবে মহি চেয়ারম্যান মোড় এলাকায় শুকুর আলী নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক কর্মী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ওই দিন (৬ জানুয়ারি) ভোরে বিএনপি জামায়াতের স্থানীয় সাত-আট জন কর্মী ঐ মোড়ে জড়ো হবার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় পুলিশের একটি পিকআপ সেখানে আসলে তারা পালিয়ে যায়। পরে সেখানে আর কেউ আসেনি।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের খাতা (রেজিস্টার) থেকে দেখা যায়, ৬ জানুয়ারি রাত নয়টা ২০ থেকে নয়টা ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যে মামলার বাদী উপ-পরিদর্শক মহিনউদ্দিন, কনস্টেবল পরিমল ও কনস্টেবল বাদশা মিঞা বাগেরহাট সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আঘাতের ধরণ সম্পর্কে সেখানে তাদের ‘জনতা দ্বারা আহত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলা দায়ের প্রসঙ্গে জাননে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হায়াতুল ইসলাম সাথে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছেই আমি বিষয়টি প্রথম শুনলাম। এ ধরণের কোন মামলার কথা আমি জানি না।’
তবে বাগেরহাট মডেল (সদর) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী আজম খান দাবি করেন যে, মামলার বক্তব্য সঠিক এবং ঐদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০ রাউসন্ড গুলি ছুড়েছিলো। আসামীদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।