দু’দিনে (শুক্রবার ও শনিবার) সুন্দরবনের নদী-খালে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ২৩ হাজার ২০০ লিটার (১১৬ ব্যারেল) তেল সংগ্রহ করা হয়েছে।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত সংগৃহীত তেল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির নিয়োজিত ঠিকাদার ৩০ টাকা লিটার দরে ক্রয় করেছে।
বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পর স্থানীয় অধিবাসী ও জেলেরা সুন্দরবনের শ্যালা নদী ও সংলগ্ন ছোট ছোট নদী-খাল থেকে এ তেল সংগ্রহ করে।
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে বাঁচানোর চেষ্টায় ঘরের থালা-বাটি, বলতি আর চটের বস্তা নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে জেলে ও স্থানীয়রা বনের প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি এলাকায় ছড়িয়ে পড়া জ্বালানি তেল সংগ্রহের এ কাজ শুরু করে।
সরেজমিন বন ও বন সংলগ্ন জয়মনিসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছোট ছোট শিশুরা থেকে শুরু করে পরিবারের প্রবীণ সদস্য সবাই তেল সংগ্রহ করছেন। অবশ্য ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনার পর এখানকার অধিকাংশ জেলে পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়ায় সবাই তেল সংগ্রহের দিকে ঝুঁকেছে।
জয়মনি ঘাটে নৌকায় সংগ্রহ করে আনা তেল পরিষ্কারের সময় ইসমাইল হাওলাদার নামে স্থানীয় জয়মনি মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্র বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বাবা-মা সবাই তেল সংগ্রহ করছে। মাদ্রাসা বন্ধ তাই আমিও তাদের সঙ্গে তেল সংগ্রহ করতে এসেছি।
পদ্মা অয়েলের ঠিকাদার আবদুল্লাহ ট্রেডার্সের মালিক মো. রফিকুল ইসলাম বাবুল শনিবার রাতে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, আজ (শনিবার) সারাদিনে স্থানীয়দের কাছে থেকে ১৮ হাজার লিটার (৯০ ব্যারেল) তেল কিনেছেন তিনি। এর আগে শুক্রবার ৫ হাজার ২০০ লিটার তেল কেনা হয়।
স্থানীয়দের মাধ্যমে তেল সংগ্রহ শুরু হওয়ার আগে অয়েল স্পিল ডিসপারসেন্ট নামে বিশেষ রাসায়নিক ছিটিয়ে তেল অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো নৌ মন্ত্রণালয়। পরে অবশ্য সুন্দরবনের জীববৈচিত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় তা স্থগিত রাখা হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে শনিবার দুপুরে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ায় রাসায়নিকবাহী কাণ্ডারি-১০ কে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তারা।
এদিকে, সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে জ্বালানি তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় গঠিত নয় সদস্যের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য শনিবার দুর্ঘটনাস্থল সংলগ্ন নদী-খাল পরিদর্শনকালে বাংলানিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সুন্দরবনের নদীতে রাসায়নিক না ছিটানোই উত্তম।
মঙ্গলবার ভোরে রাষ্ট্রায়ত্ব খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে সুন্দরবনে যাত্রাবিরতিকালে দুর্ঘটনায় পড়ে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামের ওয়েল ট্যাঙ্কার।
এমটি টোটাল নামে অপর একটি ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় তেলবাহী ট্যাঙ্কারটির এক পাশ ফেটে যায় এবং শ্যালা নদীতে ডুবে তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কারটি উদ্ধার করা হয়।
এ দুর্ঘটনা বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী-শুশুক ডলফিন ও বনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে বলে ধারণা পরিবেশবিদ ও বন্য প্রাণী গবেষকদের।