তেলের গন্ধে ভারী হয়ে ওঠেছে সুন্দরবন এলাকা।
মংলা থেকে জয়মনি খেয়াঘাট হয়ে ট্রলারে করে সুন্দরবনের শেলা নদীর বাদামতলা এলাকায় দুর্ঘটনাস্থলে( ডুবে যাওয়া তেলবাহী ট্যাঙ্কার ) যাওয়ার পথে নদীর দুই পাশের গেওয়া, কেওড়া ও বাইন গাছের গুঁড়িতে তেলের দাগ দেখা যায়। জোয়ারের সময় ভাসমান তেল লেগে থাকতে দেখা যায় তীরের মাটিতেও।
আর সুন্দরবনের ভিতরে যতদূর চোখ যায় তা থেকে বোঝা যায় বিষাক্ত এ তেল যেন সুন্দরবনের বুককে খাঁমচে ধরেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কথা হয় জয়মনি এলাকার জাহাজ নিরাপত্তা কমিটির সভাপতি মো. রনির সাথে। উদ্বেগ প্রকাশ করে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন- তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডোবার পর থেকে সুন্দরবনের নদীগুলোতে বিষাক্ত কালো কালো তেল ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি আরো জানান- জয়মনি এলাকার কোল ঘেঁষে খরমা নদী । প্রতিদিনই সেই নদী পার হয়ে এলাকার গবাদি পশু সুন্দরবনে প্রবেশ করে। কিন্তু তিন দিন ধরে ওই খাল কোন গবাদিপশু পার হয় না। বর্তমানে খালে মাছ, সাপ, হাস, মরে পড়ে রয়েছে। এছাড়া কুমিরও মরে ভেসে যেতে দেখেছেন তিনি।
জয়মনি এলাকার ভ্যান চালক রাজেন(৪৫) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন- তেলের গন্ধে রাতে ঘুম আসে না। এমনকি নদীতে নেমে কেউ পুকুরে পা ধুতে গেলে ওই পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে মাছ মরে যাচ্ছে।
চাঁদপাই ফরেষ্ট স্টেশনের রেঞ্জার আবুল কালাম আজাদ ঘটনার ভয়বহতা স্বীকার করে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন- তেলের বিষক্রিয়ায় ছোটছোট মাছ আগেই মারা গেছে। এখন বড়মাছ মরার কারণে এটা চোখে পড়ছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এদিকে ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করে বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টায় মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌ-পরিবহন, বনবিভাগ, বিপিসিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বন্দরের সভা কক্ষে জরু সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপথ পরিবহন করর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান ড. মো. শামছুদ্দোহা খন্দকার, সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমীর হোসেন চৌধরীসহ উর্ধতনরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠিত বৈঠকের ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ড. মো. শামছুদ্দোহা খন্দকার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকেকে মুঠোফোনে জানান, পুনঃরায় আদেশ না দেয়া পর্যন্ত শেলা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া তিনি জানান, নদীতে ভাসমান তেল অপসারণে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা জাহাজ কান্ডারি-১০ মংলায় পৌঁচেছে। তবে আপাতত তেল অপসারণে কাজ শুরু করছে না কান্ডারি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই মূহুর্তে স্থানীয়রা নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল তুলে নিবে। স্থানীয়দের তোলা এ তেল খুলনার পদ্মা ওয়েল ডিপো কিনে নিতে বাধ্য থাকবে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তেল উত্তোলনের পর অবশিষ্ট তেলে অপসারণে কাজ করবে কান্ডারি-১০।
মঙ্গলবার গোপালগঞ্জের একটি পাওয়ার প্লান্টের জন্য জ্বালানি তেল নিয়ে যাওয়ার সময় সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ‘ও.টি সাউদার্ন স্টার-৭’ ডুবে যায়। বৃহস্পতিবার সকাল ট্যাঙ্কারটিকে উত্তোলনের করা হয়।
এ ঘটনায় ডুবন্ত ট্যাঙ্কারে থাকা সাড়ে তিন লক্ষ লিটারেরও বেশি তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনসহ আশ পাশের প্রায় ৭০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকায়। ফলে মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র। ট্যাঙ্কারের মাষ্টার মোকলেসুর রহমান নিখোঁজ রয়েছেন।