বাগেরহাটে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে দায়িত্বরত এক শিক্ষিকাকে মারধরের ঘটনায় দায়ের মামলায় রামপালের এক ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক রফিকুল ইসলাম বাবুল রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা।
মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে রাজধানী ঢাকার গুলিস্থান এলাকার পীর ইয়ামিনী নামে একটি হোটেলের কক্ষ থেকে শাহাবাগ থানা পুলিশ তাকে আটক করে।
ঢাকার শাহাবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মোঃ সিরাজুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
২০১৪ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রমে তথ্যসংগ্রহকালে রামপাল উপজেলার বড় কাটালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বেগম খাদিজা ইয়াসমিন ও তার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকনকে পেড়িখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল মারধর করেন। এ ঘটনায় তথ্য সংগ্রহকারী বেগম খাদিজা ইয়াসমিনের স্বামী মোঃ রবিউল আলম অভিযোগ করলে গত ১০ জুলাই রামপাল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল রামপাল থানায় প্রভাব বিস্তার করে তদন্ত কাজে বাধা সৃষ্টি ও শিক্ষিকা বেগম খাদিজা ইয়াসমিন ও তার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকনকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করছেন বলে তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের প্রক্ষিতে নির্বাচন কমিশন গত ২৩ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়। একই সাথে রামপাল থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করার অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবদের এ নির্দেশনার চিঠি দেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মু. আবদুল অদুদ।
শিক্ষিকাকে মারধর ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের সংবাদ অনলাইন কমিউনিটি পোর্টাল বাগেরহাট ইনফো ডটকমসহ স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা এবং বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করে।
পরে বাগেরহাট পুলিশ সুপারের নির্দেশে এই আলোচিত মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নিকট হস্তান্তর করা হয়।
রামপাল থানায় দায়ের করা মামলা ও তথ্যসংগ্রহকারী শিক্ষিকার স্বামী মোঃ রবিউল আলম খোকন জানান, পেড়িখালী ইউপি চেয়্যারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল বাবুল স্থানীয় মজীদ মীর নামের এক ভোটারের স্থান পরিবর্তনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজে নিয়োজিত শিক্ষিকা তার স্ত্রী খাদিজাকে নির্দেশ দেয়।
এ বিয়য়ে ওই শিক্ষিকা চেয়ারম্যানকে তার সীমাবদ্ধতার কথা উল্ল্যেখ করে ভোটার তালিকায় নাম স্থানান্তর করার ক্ষমতা নির্বাচন অফিসের জানিয়ে তাকে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধ করলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর গত ১৪ জুন দুপুরে চেয়ারম্যান খোকনের দোকানে ঢুকে খাদিজাকে কিল ঘুষি ও লাথি শুরু করে। একপর্যায়ে স্ত্রীকে বাঁচাতে তিনি এগিয়ে গেলে তাকেও চেয়ারম্যান বেধড়ক মারপিট শুরু করে। এ সময় শিক্ষিকা খাদিজা ইয়াসমিন দৌড়ে পাশ্ববর্তী রেজাউলের বাড়িতে গেলে সেখানে ঢুকে চেয়্যারম্যান পূনরায় মারপিট করে।
পরে স্থানীয়রা তাদের গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। তারা এলাকায় ফিরলে চেয়ারম্যান বাবুল ও তার বাহিনীর চাপের করনে স্বপরিবারে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
আটক ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলের বিরুদ্ধে রামপাল থানায় আরো কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাগেরহাট গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শমসের আলী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, মামলায় অভিযুক্ত চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুলকে ঢাকার শাহাবাগ থানা পুলিশ আটক করেছে। তাকে বাগেরহাটে আনার ব্যাবস্থা করা হচ্ছে।