বঙ্গোপসাগর থেকে একটি ফিসিং ট্রালারসহ ১৫ বাংলাদেশি জেলেকে ভারতীয় উপকূল রক্ষীবাহিনী ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইলিশ আহরণের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে বঙ্গোপসাগের মাছ ধরতে গিয়ে “এফবি রহিমা” নামে একটি ট্রলারসহ বাংলাদেশের ওই ১৫ জেলে ভারতের উপকূল রক্ষীবাহিনীর হাতে আটক হয় বলে দাবি করেছেন ট্রলার মালিক।
চলতি মাসের ২১ অক্টোবর তাদের আটক করা হয়।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে এফবি রহিমা ট্রলারের মালিক বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোনতাকাটা গ্রামের হাতেম আলী মোল্লার জামাতা মাছুম মীর বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বিষয়টি জানান।
আটক জেলেরা হলেন- এফবি রহিমা ট্রলারের মাঝি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার মধ্য রায়েন্দা গ্রামের মৃত হাতেম আলী মোল্লার ছেলে কামাল মোল্লা (৩৩), ওই গ্রামের হাতেম আলী মোল্লার ছেলে আবদুস ছালাম মোল্লা (৪৩), আযাহার আলীর ছেলে এমাদুল (৩৬), সত্তার হাওলাদারের ছেলে শহিদুল হাওলাদার (২৭), মৃত সত্তার হওলাদারের ছেলে সোবাহান হাওলাদাল (৩৫), মালেক হওলাদারের ছেলে হাবিব হওলাদার (২৬), মৃত মুনসুর আলী গাজির ছেলে মাছুম গাজী (২৯), মৃত আব্দুল গনী মোল্লার ছেলে বেলায়েত মোল্লা (২৯)।
একই উপজেলার পূর্ব খোন্তাকাটা গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে শরিফুল মিয়া (২৫), মৃত মেছের ফরিরের ছেলে নুরু ফকির (৪৩), মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামের বারেক কবিরাজের ছেলে ওবাইদুল কবিরাজ (৩৪), রায়েন্দা গ্রামের শাহ জাহান হাওলাদারের ছেলে জহির হওলাদার (২০)।
একই জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার কুমারখালি গ্রামের আলোম গাজী (৩৯), পটুয়াখালির কলাপাড়া উপজেলার তারিকাটা বাইলতলী গ্রামের তারেক মুন্সি (৩৬) এবং বরিশাল সিটি করপরেশনের গণপাড়া এলকার খোরশেদ আলম (৪৯)।
এফবি রহিমা ট্রলারের মালিক হাতেম আলী মোল্লার জামাতা মাছুম মীর বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ১৭ অক্টোবর ১৫জন জেলেকে নিয়ে তাদের ট্রলার ‘এফবি রহিমা’ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যায়। পরে সেখান থেকে ভারতীয় উপকূল রক্ষীবাহিনী ওই ১৫ জেলেকে আটক করে নিয়ে যায়।
ভারতের দক্ষিণ চব্বিশপরগণা জেলার আলিপুর থানা পুলিশ তাদেরকে ফোন করে ওই জেলের আটকের খবর নিশ্চিত করেছে বলেও জানান তিনি।
ভারতের দক্ষিণ চব্বিশপরগণা থানা পুলিশের ফোনের বরাত দিয়ে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি জানান, বাংলাদেশি ওই জেলেরা বর্তমানে ভারতে আলিপুর কারাগারে রয়েছে। ভারতের জলসীমায় অনুপ্রেবেশের অভিযোগে সে দেশের উপকূল রক্ষীবাহিনী চলতি মাসের ২১ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরের ভারতীয় সমুদ্রসীমা থেকে ওই জেলেদের আটক করে।
ভারতের উপকূল রক্ষীবাহিনী সূত্রে জানা যায়, জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানা ছাড়িয়ে ভারতীয় সমুদ্রসীমায় ঢুকে পড়ায় তাঁদের আটক করা হয়েছে। ট্রলার থেকে কিছু মাছ এবং মাছ ধরার জাল আটক করা হয়েছে। ট্রলারটির নাম ‘এফবি রহিমা’।
তবে পুলিশের দাবি, জেলেরা মাছ ধরার জন্য বঙ্গোপসাগরে জাল ফেলেন নি।
২১ অক্টোবর ওই জেলেদের কাকদ্বীপ মহকুমা বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হলে জেরার সময় জেলেরা জানান, ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ায় দিগভ্রান্ত হয়ে তাঁরা ভারতের সীমানায় ঢুকে পড়েছেন।
এদিকে, ভারতীয় কারাগারে ওই জেলেদের আটকের খবর এসব জেলেদের পরিবারে চলছে এক অজানা আশঙ্কা।
শরণখোলা ইউনিয়নের খোন্তাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খান মতিউর রহমান মঙ্গলবার বিকেলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ভারতে আটক অধিকাংশ জেলের বাড়ি আমার ইউনিয়নে। ওই সব জেলে পরিবার গুলোতে এখন চলছে কান্নার আহাজরি। বেশির ভাগ পরিবার গুলোতে আটক ওই জেলেরাই ছিলেন এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
তিনি জানান, কি ভাবে আটক জেলেদের ছাড়িয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, অসহায় দ্ররিদ্র জেলে পরিবার গুলো এখন সরকারের কাছে আটক জেলেদের মুক্তির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাগেরহাটের শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী আব্দুস ছালেক মঙ্গলবার বিকেলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বাংলাদেশের ১৫ জেলে ভারতের নৌবাহিনী অথবা উপকূল রক্ষীবাহিনীর কাছে আটক হয়েছে বলে তারা শুনেছেন। এ ঘটনায় ২৬ অক্টোবর শরণখোলা থানায় ট্রলারের মালিক হাতেম আলী মোল্লা একটি জিডি (জিডি নং ৮৭৯) করেছেন।
বিষয়টি বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং প্রশাসনের মধ্যমে ভারতের দূতাবাস এবং সেদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করতে ওই ট্রলার মালিককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি।
এব্যাপারে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) নিজামুল হক মোল্যা মঙ্গলবার বিকেলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে ৫টি ট্রলারসহ ৬৪ ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এব্যাপারে আমরা ভারতের দূতাবাসকে বিষয়টি অবহিত করি।
বাংলাদেশের কোনো জেলে সে দেশে আটক হলে ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি জানার কথা। তবে এ ব্যাপারে এখনও আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আসেনি।
তাই বিষটি সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।