অভাবের সংসার, নুন আনাতে পান্তা ফুরায়। আর সে পান্তা তৈরি-তেও যে লাগে আগুন। কিন্তু সামান্য জ্বালানী কাঠ বা আগুনের ব্যবস্থা করাও যে বড় কষ্টের জলিলের সংসারে।
তাই তো চেষ্টা চলে কখনো রাস্তার পাসে পাতা কুড়িয়ে আবার কখনও সড়কের পাসের কোন সরকারি গাছের শুক ডাল সংগ্রহ করে জ্বালানীর ব্যবস্থা করার। আর তা পারলে তো কিছুটা অর্থ বাঁচে জলিলের পরিবারের খাবার কিনতে।
বলছি বাগেরহাট পৌর এলকার খারদ্ধার গ্রামের একটি বস্তিতে বসবাসরত জলিল-হীরার সংসারের কথা। শনিবার দুপুরে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহে গিয়ে বিদ্যুৎস্পষ্টে নিহন হন জলিল।
জলিলের প্রতিবেশি রিকশা চালক মো. শামিম হাওলাদার (৪৩) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তার বাবা এবং জলিলের বাবা মৃত গফুর আকন কাজের খোঁজে এই সাথে পিরোজপুরের মঠ বাড়িয়া থেকে বাগেরহাট আসেন। বাগেরহাট আসার পর জন্ম হয় জলিলের।
চার ভাই বোনের অভাবের সংসারে জলিল ছিলো সবার ছোট।
জলিলের বড় ভাই রিকসা চালক কাদের আকন (৪৫) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, পেশায় নির্মান শ্রমিক জলিল আকন ওরফে গেদু (৩০) শনিবার দুপুরে রান্নার জন্য জ্বালানি সংগ্রহের জন্য শহরের জজ কোর্ট সংলগ্ন খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের পাসের একটি মহগনি গাছে ওঠে। দুপুর পৌনে ১ টার দিকে গাছ থেকে কাঠ সংগ্রহের জন্য এটি ছোট ডালে বসে লাঠি দিয়ে অন্য একটি শুকনো ডাল ফেলার চেষ্টা করছিল জলিল। এসয় পাশের বিদ্যুৎ লাইনের সাথে গাছের এটি ডাল স্পর্শ করলে আগুন ধরে যায়।
বাগেরহাট সদর মড়েল থানর উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ঈমন উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, দুপুর ১ টার কিছু আগে ওই গাছ লাগোয়া বিদ্যুৎ লাইনের সাথে পৃষ্টে একটি ডালে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থালে জলিল আকন ওরয়ে গেদু নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় এবং লাশটি গাছে ঝুলে যায়।
স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ফায়ার সার্ভিসে খরর দয়। তারা (ফায়ার সার্ভিস) লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহত জলিল আকন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ছোট মাছুয়া গ্রামের বাসিন্তা। তিনি বাগেরহাট শহরের খারদ্ধার এলাকার শওকত আকঞ্জির বাড়ি ভাড়া থাকতেন।
জলিলের স্ত্রী হীরা খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, দুপুরে রান্নার জন্য ঘরে কাঠ ছিলোনা। তাই স্বামীকে কাঠ আনতে বলেছিনে। কিন্তু কাঠ নিয়ে তিনি যে আর ফিরবেন না তা কখনওই ভাবে নি।
কথা বলার এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা হীরা খাতুন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, দুই ছেলে রহিম (১২) ও সাজ্জাদ (০৯)। টাকার অভাবে বড় ছেলেটাকে লেখা পড়া করাতে পারিনি। ছোটটা খারদ্ধার প্রাথমিক স্কুলে ২য় শ্রেণীতে পড়ত। এদের নিয়ে আমি এখন কি করে বাঁচব ?