বঙ্গোপসাগর উপকুপলের সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের দুবলাসহ ১৪ টি চরে শুরু হচ্ছে ৫ মাস ব্যাপী শুটকি আহরন মৌসুম।
এবছর সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের অনুমতি (পাশ-পারর্মিট) নিয়ে ডিপো মালিক, বহরদ্দারসহ প্রায় ১০ হাজার জেলে শুক্রবার ভোর রাতে ভাটার টানে মংলার পশুর নদী থেকে জেলে বহার নিয়ে সমুদ্রে যাত্রা করেছে।
তবে এবারও উপকূলবর্তী জেল ও মৎস ব্যবসায়িদের মাঝে দস্যু আত্মংঙ্ক বিরাজ করায় জেলে বহরের সমুদ্র যাত্রায় মংলাস্থ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিয়েছে বলে কোস্ট গার্ড ও বনবিভাগ জানিয়েছে। পাশাপাশি জোরদার করা হয়েছে সুন্দরবনে র্যাবের টলহ।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, সমুদ্রে মৎস্য আহরন ও শুটকি মৌসুমকে ঘিরে এবছরও প্রায় ১০ হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী জড়ো হবে সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহেরআলীর চর, আলোরকোল, অফিসকিল্লা, মাঝেরকিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, চাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদাখালী চরে। সুন্দরবন অভ্যন্তরে কমপক্ষে ১৫ টি মৎস্য আহরন, প্রক্রিয়াকরন ও বাজারজাতকরন কেন্দ্র নিয়ে এই দুবলা জেলে পল্লী।
দুবলা জেলে পল্লীর জেলেরা নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুটকী তৈরির জন্য প্রতি বছর অস্থায়ী ঘর ও মাচা তৈরি করে থাকে । জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বেহুন্দীসহ বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে মাছ শিকার করে তা বাছাই করে জাত ওয়ারী মাছ গুলো শুটকী করে থাকে। জেলে পল্লীতে জেলেদের ঘর তৈরি ও জ্বালানি ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত রাজস্ব আদায় করে থাকে সুন্দরবন বন বিভাগের দুবলা টহল ফাঁড়ি।
এ পল্লীতে মূলত জেলেদের মৎস্য আহরন ও শুটকি প্রক্রিয়াকরনের ওপর ভিত্তি করেই বন বিভাগের রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। গত বছর এ খাত থেকে সুন্দরবন বন বিভাগ রাজস্ব আয় করেছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
চলতি মৌসুমের শুরুতেই দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকুলের হাজার হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা সুন্দরবন সংলগ্ন দুবলার চরাঞ্চালে সমবেত হয়েছে। দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়া মধ্যে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বনদস্যুদের উৎপাত আশংকার মধ্যেও জীবন জীবীকার তাগিদে সাগর পাড়ের চরাঞ্চালে পৌছেছে এসব হত দরিদ্র জেলেরা।
এদিকে বঙ্গোপসাগরসহ পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে কমপক্ষে ১৬টি বনদস্যু বাহিনীর মুক্তিপনের দাবীতে জেলে ও বনজীবীদের অপহরন বানিজ্যের কারনে আতংকে রয়েছে এসব জেলে, বহরদার ও ডিপো মালিকরা। এবারের শুটকি মাছ আহরন মৌসুমকে সামনে রেখে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বন কর্মকর্তা ও সুন্দরবনের দুবলা ফিসার ম্যান গ্রুপের নেতারা মতবিনিময় সভা করে।
ওই সভায় সুন্দরবনের বনজ সম্পদ বিনষ্ট না করার অঙ্গিকারসহ বনদস্যু তৎপরতা রোধে সরকারের কাছে দাবী জানান মৎস্য ব্যবসায়ী নেতারা।
মৎস্যজীবী নেতারা জানান, এবার প্রায় ১০ হাজার জেলে ও বহরদার মংলা থেকে কোস্টগার্ডের সহয়তা নিয়ে জেলেরা নিরাপদে শুটকি পল্লীতে পৌছাবে। মৌসুমের শুরুতেই দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকুলের হাজার হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা সুন্দরবন সংলগ্ন দুবলার চরাঞ্চালে দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়া,ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বনদস্যুদের উৎপাতের মধ্যেও জীবন -জীবীকার তাগিদে তারা শুটকি আহরণ করে থাকে।
সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকাসহ বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ কালে প্রতিবছর বনদস্যুদের মোটা অংকের চাঁদা দেওয়াসহ তাদের নানা হয়রানীর শিকার হতে হয়। এর থেকে পরিত্রান পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবী জানান তারা।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, এবছর শুটকির জন্য মাছ আহরনে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে ১১৫ জন ডিপো মালিক, ১২ জন বহরদার, ৩ হাজার ৪’শটি অস্থায়ী ঘর তৈরীর জন্য জেলেরা পাশ-পারমিট নিয়েছে।
গত শুটকী মৌসুমে এ পল্লীর জেলেদের আহরিত ২৫ হাজার ২’শ ৩৮ কুইন্টাল শুটকি মাছ থেকে সুন্দরবন বিভাগের রাজস্ব আয় করে ১ কোটি ২৭ লাখ ৯ হাজার টাকা। গত মৌসুমে ৫৫ জন ডিপো মালিক, ১৩ জন বহরদার, ৮৯৫টি জেলে ঘরে থেকে প্রায় ৯ হাজার জেলে শুটকির জন্য মাছ আহরন করে।
এদিকে এবছর সুন্দরবনের সুন্দরীকাঠ, বনসম্পদসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে জেলেরা গেরাফি (এক ধরনের ফাঁদ) তৈরি করে মাছ আহরনের নজর দারি রাখ বলে বলে বনবিভাগ জানিয়েছে। এর ফলে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বনস সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে উজাড় হচ্ছে সুন্দরবন।
এর হাত থেকে রেহাই পেতে এবার বন বিভাগ ও ব্যবসায়ীরা যৌথ মতবিনিময় সভায় একমত পোষন করে এবার সুন্দরবনে কোন প্রকার বনজ সম্পদ যেন ক্ষতি না হয় সে সকলকে সচেতন থাকার অঙ্গিকার করে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমির হোসেন চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রতিবছর শুটকি মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার জেলে কয়েক শত ট্রলার ও নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ আহরণ করে। জেলেদের নিরাপত্তা এবং কোন প্রকার বনজ সম্পদ বিনষ্টের বিরুদ্ধে এবারও কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জেলেদের নিরাপত্তার বিষয়ে র্যাব-৮ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফরিদুল আলম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সুন্দরবনে জেলে ও বনজীবিদের নিরাপত্তায় র্যাবের অভিয়ান ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যহত আছে। শুটকি পল্লীর নিরাপত্তায় র্যাব পুরো শুটকি মৌসুম জুড়ে গত বারের মতন এবারও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করেছে।