বাগেরহাটের রামপালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনটি সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে গত ছয় মাস ধরে।
গত এপ্রিলে হঠাৎ দেবে যায় হাসপাতালের ৩১ শয্যাবিশিষ্ট মূল ভবনটি। এরপর ভবনটি সিলগালা করে রোগীদের পাশের সম্প্রসারিত ১৯ শয্যার ভবনে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু এখনো দেবে যাওয়া ভবনের সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
ফলে উপজেলার এক মাত্র এ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি নিজেই এখন রোগী।
রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ১৯৬৫ সালে বাগেরহাটের রামপালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট রুরাল হেলথ সেন্টার (আরএসএস) হিসেবে দোতলা এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন এবং সদরের দুই লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এটি। ১৯৯০ সালে এটিকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। মূল ভবনের পাশে বহির্বিভাগসহ ১৯ শয্যার আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা য়ায়, গত ৮ এপ্রিল রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে মূল ভবনের বাইরের অংশে বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয়। ভবনের বেশ খানিক অংশ দেবে যায়। কিছু কিছু কক্ষের পলেস্তারাও খসে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে রোগীদের পাশের ভবনে স্থানান্তর করা হয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মিজানুর রহমান জানান, পরদিন বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাগেরহাট জেলার প্রকৌশলীকে জানানো হয়। সে সময় তারা ভবনটিকে ব্যবহারের অনুপযোগী হিসেবে সিলগালা করে দেয়। তখন তারা দ্রুত ভবন সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মাণেরও আশ্বাস দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনটির চারপাশের দেয়ালে বিরাট ফাটল। দোতলায় রোগীদের চিকিৎসার জন্য পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড দুটি তালা দিয়ে রাখা। তবে জায়গার অভাবে নিচের অন্য কক্ষগুলো দাপ্তরিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশের সম্প্রসারিত ১৯ শয্যার ভবনে পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডে প্রায় ৪০ জনের মতো রোগী গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন।
অনেকে কক্ষের মেঝেতে চাদর বিছিয়ে আছেন। অনেকে জায়গা না পেয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের ফিরোজ শেখ (৪০) বলেন, এই ছোট কক্ষের মধ্যে অনেকগুলো খাট বসানো হয়েছে। আর রোগীদের স্বজন যখন আসে, তখন রীতিমতো দমবন্ধ অবস্থা হয়।
সোনাতুনিয়া গ্রামের পারভীন (২৭) বলেন, ‘আমাদের এ উপজেলায় আর কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। আমাদের মতো গরিব মানুষের টাকা খরচ করে খুলনায় যাওয়ার সাধ্য নেই। এ কারণে কষ্ট হলেও কিছু করার নেই।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবিকা মমতা রানী সরকার বলেন, ‘৫০ শয্যার সুবিধা যদি আমাদের ১৯ শয্যায় দিতে হয়, তাহলে রোগীদের ভোগান্তি ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। মাঝেমধ্যে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।’
এব্যাপারে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল কুমার দেবনাথ বলেন, ‘জায়গার অভাবে আমরা নিজেরাই ঝুঁকি নিয়ে মূল ভবনে কাজ করছি। রোগীদের ভোগান্তিও চরমে। ঘটনার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসে দেখে গেলেন। দুরবস্থার কথা আমরা বহুবার জানিয়েছি। কিন্তু এখনো প্রতিকার পাইনি।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাগেরহাট জেলার সহকারী প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র সিনহা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই এ ভবনের বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।’