বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হ্যেরিটেজ) সুন্দরবনসহ উপকূলের মূর্তিমান আতংক দস্যু। আর এ দস্যু তৎপরতার নেপথ্যে রয়েছে ছোট বড় নানা দস্যু বাহিনী।
বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণের আবাসভূমি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে র্যাব, কোস্টর্গাডসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত বন্দুক যুদ্ধে একের পর এক বাহিনী প্রধানসহ বনদস্যুরা নিহত হলেও ঐসব বাহিনী এক বা একাধিক নামে ফের শুরু করে বনদস্যুতা।
বর্তমানে সুন্দরবনসহ উপকূলে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে কম করে হলেও ৩০টি দেশী-বিদেশী বনদস্যু বাহিনী। কেবল জেলে ও বনজীবীদের মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ-বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই তাদের তৎপরতা। আর্ন্তজাতিক চোরাবাজারে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ ও লোনা পানির কুমিরের চামড়া, মাংস ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বনদস্যুরা এসব বন্যপ্রানী শিকারে নেমেছে।
চোরাকারবারিদের আন্তর্জাতিক বাজার থাইল্যান্ড সীমান্তের ”গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল”। সেখানে এসব বেচে তারা আয় করছে হাজার হাজার ডলার। সুন্দরবনসহ উপকূলে মাদকদ্রব্যসহ অবৈধ পণ্য ও আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছে বনদস্যুরা।
সুন্দরবন বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মৎস্যজীবী নেতা ও জেলে-বনজীবীদের কাছ থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
ফাঁদ, ছিটকানি কল, বিষ টোপ ও গুলি করে শিকার করছে এসব শিকার নিষিদ্ধ বন্যপ্রানী। বিত্রিু করতে গড়ে তুলেছে আর্ন্ত:জাতিক চোরাকারবারীদের সাথে নেটওয়ার্ক।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বন্যপ্রানী চোরা বাজার সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখে এমন একটি সূত্রে জানা গেছে, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পেটের বর্জ্য ছাড়া আর কোন কিছুই ফেলনা নয়। শিকার করা পূর্ন বয়স্ক একটি বাঘের দাম ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকা। বাঘের চামড়া, বাঘের মাংসের যৌন উত্তেজক তেল, দাঁত, নখ, মাথার খুলিসহ বাঘের হাড়ও বিত্রিু হয় উচ্চ মূল্যে। হরিণ, কুমির, উদবিড়াল ও অজগর সাপের চামড়া, ছোট জ্যান্ত কুমির, হরিণের শিং, হরিণের নাভীর কোস্তরী, হাঙ্গরের পাখনা ও কুমিরের তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে গোল্ডেন ট্রয়াঙ্গলে।
খোদ সুন্দরবন বিভাগের হিসাব মতে ২০০১ সাল থেকে ২০১২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মারা গেছে ১৭ টি বাঘ । তবে পরিবেশবিদদের হিসেব মতে এর সংখ্যা ৩০টি।
স্যোসাল মিডিয়ায় সুন্দরবনে ফাঁদে আটক বাঘের ভিডিও:
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বৃহত্তর আবাস ভূমি আমাদের সুন্দরবনের বাঘ এখন আর ভালো নেই। বাঘের হিংস্রতায় বনে বসে ভয়ে কেউ তার নাম নেয়না। ডাকে ‘বাঘ মামা’ বলে। তারপরও থেমে নেই বাঘসহ বন্যপ্রাণী শিকার। এবছরের ২১ জানুয়ারী পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের লাউডোপ এলাকায় শিকারীর ফাঁদে আটকাবস্থায় বাঁচার প্রানপন লড়াই করা এমনই এক বাঘিনীর ভিডিও ফুটেজ ধারন করে এক ইকোট্যুরিস্ট। সেই ভিডিও ফুটেজ স্যোসাল মিডিয়ায় আপলোড করে ছেড়ে দেয় সে।
ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি বাঘের সামনের বাম পা শিকারীর ফাঁদে আটকে রয়েছে। প্রানপন চেষ্টার পর বাঘটি দাঁত দিয়ে শিকারীর ফাঁদ কেটে খোড়াতে-খোড়াতে গহীণ অরণ্যে চলে যাচ্ছে। স্যোসাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ দেখার পর সর্বমহলে শুরু হয় তোড়পাড়। আহত বাঘটিকে উদ্ধার ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে নির্দেশ আসে সরকারের হাইকমান্ড থেকে। টনক নড়ে সুন্দরবন বিভাগের। রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ১২ দিন আপ্রান চেষ্টার পর গত ৮ ফেব্রুয়ারী একই এলাকা থেকে ভাঙ্গা পায়ে পচন ধরা অবস্থায় বাঘটিকে খাবারের টোপ রেখে খাচাবন্দি করতে সক্ষম হয় সুন্দরবন বিভাগ। দেখা যায় এটি ৬/৭ বছরের একটি বাঘিনী। উদ্ধারের পর দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে। দেশসেরা ভ্যেটনারী র্সাজনদের দিয়ে অপারেশনের পরও বাঁচানো যায়নি বাঘিনীটিকে।
বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে ১৯ ফেব্রুয়ারী মৃত্যুর সাথে লড়াই করে হেরে যায় বাঘিনী। র্দূগম সুন্দরবনে এভাবে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে বনদস্যু-শিকারীদের হাতে একের পর এক মারা পড়ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অন্যান্য বন্যপ্রানী।
সুন্দরবন ‘সোনার খনি’:
প্রকৃতির অপর বিস্ময় সুন্দরবন। এই ম্যানগ্রোভ বন দিনরাত ২৪ ঘন্টায় ৬ বার তার রূপ পাল্টায়। বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা উপকূল থেকে দেখা যায় সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের ৪টি রেঞ্জের অন্তরভুক্ত। ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এবনের স্থল ভাগ হচেছ ৪ হাজার ১৪৩ বর্গ কিলোমিটার। ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল নিয়ে জল ভাগের পরিমান ১ হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এবনে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। বনের ৭৩ ভাগ গাছ’ই হচ্ছে সুন্দরী, ১৬ ভাগ গেওয়া গাছ।
সুন্দরবনে ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরিসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর প্রানীসহ ৩শ’ প্রজাতির পাখি রয়েছে। আছে ৪৪০টি বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দেড় লাখ মায়াবি হরিণ, প্রায় ৩শ’ লোনা পানির কুমির, ৫০ হাজার বানর, ২৫ হাজার করে বন্য শুকর ও উদবিড়াল। সুন্দরবনের নদ-নদী ও উপকূলে বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতি ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির সাড়ে ৬ হাজার ডলফিন, ১ প্রজাতির তিমি, ২১০ প্রজাতির সাদামাছ, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৪২ প্রজাতির মলাক্রাা, ১৩ প্রজাতির কাকড়া ও ১ প্রজাতির লবষ্টার রয়েছে। প্রতি বছর এখান থেকে আহরিত হয়, ১৫ হাজার মেট্রিক টন সাদামাছ, ৮শ’ মেট্রিক টন রূপালী ইলিশ, ৪ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি-কাকড়া। হাজার-হাজার মেট্রিক টন গরান-গোলপাতা-ছন ছাড়াও প্রতি বছর আহরিত হয়, ১৬ হাজার মন মধু।
এই বনের উপর ৭৫ হাজার জেলে-মৌয়াল-বনজীবীসহ প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষ্য ভাবে জীবন-জীবিকা জড়িত উপকূলের ১০ লাখ মানুষের। ইকোট্যুরিজম (প্রতিবেশ পর্যটক) করতে প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমন করে। সুন্দরবনের এই বিশাল সম্পদের ভান্ডর, বন্যপ্রানী ও বন বিভাগকে রাজস্ব দিয়ে সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধানে আসা জেলে-বনজীবী ও ইকোট্যুরিস্টদের ‘মুলধন’ করে তাদের মুক্তিপনের দাবীতে আপহরনের র্টাগেট করে নেমে পড়ে বনদস্যু বাহিনীগুলো।
সুন্দরবনে ৩০ বনদস্যু বাহিনী:
সুন্দরবনের প্রকৃত রাজা এখন আর রয়েল বেঙ্গল নয়,-ম্যানগ্রোভ এবনের দন্ডমুন্ডের কর্তা বনদস্যুরাই। বর্তমানে বনসহ সুন্দরবন উপকূলে ‘রাম রাজত্ব’ কায়েম করেছে ৩০টির অধিক দেশী-বিদেশী বনদস্যু বাহিনী। এসব বনদস্যু বাহিনীর ১৭টি হচ্ছে বাগেরহাট জেলার।
বনদস্যু বাহিনীর র্শীষে রয়েছে প্রায় দু’বছর ধরে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কাকদ্বীপে বনদস্যু বাহিনী প্রধান বাগেরহাটের রাজুর নিয়ন্ত্রনাধীন ৩টি বাহিনী। জাহাঙ্গীর,ইলিয়াস ও রফিক বাহিনী প্রধানের বাড়ীও বাগেরহাট জেলায়। এই ৩ বাহিনী পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ ও পশ্চিম বিভাগের উপকূল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ৬০ থেকে ৭০ জনের এই ৩ বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে রয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলির বিশাল ভান্ডার। তারা ব্যাবহার করে ফোর সিলিন্ডার ৩টি স্প্রিডবোট, ২টি হাই স্প্রিডবোট ও দ্রুতগতির ৬টি ট্রলার।
শীর্ষ বাহিনী প্রধান রেজাউল ওরফে শীর্ষ বন্দুক যুদ্ধে নিহতের পর এখন বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের বেল্লাল, আউয়াল একই জেলার রামপালের মোশা ৩টি বাহিনী গঠন করে সুন্দরবনে অপহরন বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। খলিল বাহিনী প্রধান খলিলের বাড়ী বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ভাগায়। একই উপজেলার চাড়াখালী গ্রামে ভাই ভাই বাহিনী প্রধান মোশারেফ ওরফে মশার বাড়ী।
এছাড়া বাগেরহাট জেলায় বাড়ী অন্য বনদস্যু বাহিনীগুলো হচ্ছে পুলিশ বাহিনী, ছোট আউায়াল বাহিনী, সোহরাব বাহিনী, কামাল বাহিনী, মালেক বাহিনী, শুকুর-জুম্মান বাহিনী, নয়ন বাহিনী, শরণখোলার বাহিনী প্রধান সমিরের শান্ত বাহিনী ও মংলার তৌহিদ দফাদারের তৌহিদ বাহিনী। খুলনা জেলায় বাড়ী বনদস্যু বাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে, কালু বাহিনী, এই বাহিনী প্রধান কালুর বাড়ী খুলনার ফুলতলা এলাকায়। বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনীর চাকুরিচুত্য সদস্যদের নিয়ে গঠিত দুর্ধর্ষ মুসা বাহিনী তৎপর পূর্ব সুন্দরবনের বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জ ও পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের দাকোপ-কয়রা এলাকায়। মুসার বাড়ী খুলনা সদরে।
এছাড়া খুলনা জেলায় বাড়ী অন্য বনদস্যু বাহিনীগুলো হচেছ রাঙ্গা মুকুল বাহিনী, বকর-বাবু বাহিনী, আমিনুল বাহিনী। সাতক্ষীরা রেঞ্জসহ সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের ভারতীয় উপকূলের চালতেবাড়ীয়া-হরিনগর এলাকার দন্ডমুন্ডের কর্তা আলিফ বাহিনী। জানাগেছে বাহিনী প্রধান আলিফর বাড়ী সাতক্ষীর জেলায়। এছাড়া খোকা-বাবু বাহিনী, রাঙ্গা বাহিনী, জোনাব আলী বাহিনী, আলিম বাহিনী, মজিদ বাহিনী, সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার দুই ভাই চাঁদ মেনকা-খোকার বাবু বাহিনী।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে তৎপর রয়েছে একটি ভারতীয় বনদস্যু বাহিনী। নিবর বাহিনী নামের এই দলের সদস্যরা সীমান্ত নদী পেরিয়ে এসেও মুক্তিপনের দাবীতে সুন্দরবনের জেলে-বনজীবীদের অপহরন বানিজ্য চালাচ্ছে। এসব বাহিনীর রয়েছে দ্রুতগতির জলযান ও অত্যাধুনিকসহ অগ্নেয়াস্ত্রের বিশাল ভান্ডার।
একটি বন্দুক যুদ্ধে র্যাব-কোস্টগার্ডের করুন হাল:
বনদস্যুদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সুন্দরবনে বড় ধরনের যৌথ অভিযানে নামে র্যাব ও কোস্টর্গাড। দিনটি ২০০৬ সালের ২ ডিসেম্বর। র্যাব-৬ এর তৎকালিন অধিনায়ক অধিনায়ক মেহেদী হাসান ও কোস্টগার্ড মংলা পশ্চিম জোনের অপারেশন অফিসার লে: কমান্ডার সিদ্দিকের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী পশুর নদী দিয়ে এগিয়ে যায় ঘটনাস্থল পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায়।
সুন্দরবনের একটি খালের মধ্যে রাত দেড়টার দিকে এলিটফোর্স র্যাব-কোস্টগার্ডে যৌথ বাহিনীর সাথে শুরু হয় বনদস্যুদের বন্দুকযুদ্ধ। এক পর্যায়ে বনদস্যুরা এক র্যাব ও দুই কোস্টগার্ড সদস্যকে জড়িয়ে ধরে পানিতে ঝাপ দেয়। রণে ভঙ্গ দেয় যৌথ বাহিনী। ফলাফল পরে পশুর নদীতে ভেসে ওঠে প্রশিক্ষিত এলিটফোর্স র্যাব-৬ এর সদস্য মো:কাঞ্চন, দুই কোস্টগার্ড সদস্য এমএ ইসলাম ও এমএইচ কবিরের লাশ। এঘটনায় সেসময়ে মংলা থানায় হত্যা মামলা হলে ২০০৭ সালের ৮ মে পুলিশ ১৫ বনদস্যুকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়।
আলোচিত এই মামলায় বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক চলতি বছরের ১৯ আগস্ট ৬ পরাতক বনদস্যুকে ফাসি, ৭ পলাতক বনদস্যুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডাদেশ ও ২ বনদস্যুকে বেকসুর খালাসের রায় প্রদান করেন। একই সাথে আদালতের বিচারক যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডাদেশ ৭ আসামির প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা , অনাদায়ে আরো এক বছর করে সশ্রম কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন।
এথেকে খুব সহজে অনুমান করা যায় সুন্দরবনের দন্ডমুন্ডের কর্তা বনদস্যুরাই। র্দূগম সুন্দরবনে অনেক প্রতিকুলতার মধ্যেও আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বনদস্যু দমনে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিগত ২০১২ ও ২০১৩ সালে পূর্ব সুন্দরবনে বিভাগের বাগেরহাট জেলা এলকায় আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে একাধিক বাহিনী প্রধানসহ ৩০ বনদস্যু নিহত ও বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি উদ্ধার হয়েছে।
৮ মাসে অপহৃত ১ হাজার:
সুন্দরবনসহ উপকূলে বনদস্যুদের হাতে প্রতিনিয়ত মুক্তিপনের দাবীতে জেলে-বনজীবীদের অপহরনের ঘটনা ঘটছে। উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতির হিসেব মতে,গত ৮ মাসে বনদস্যুরা সুন্দরবনসহ উপকূল থেকে মুক্তিপনের দাবিতে হাজারের অধিক জেল-বনজীবী অপহৃত হয়েছে।
অপহৃতদের একটি অংশকে অভিযান চালিয়ে কোস্টর্গাড, র্যাব, পুলিশ, ও বন রক্ষীরা উদ্ধার করলেও বড় একটি অংশ দালালের মাধ্যমে মুক্তিপন দিয়ে বনদস্যুদের হাত থেকে ছাড়া পায়। উপকূলী মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী জানান, উপকূলের মৎস্য বন্দরগুলোতে বনদস্যুদের এজেন্টদের কাছে নির্ধারিত চাঁদা দিয়ে ‘টোকেন’ না নিয়ে কোন জেলে বা বনজীবী সুন্দরবনসহ উপকূলে জেতে পারেনা।
টোকেন না নিয়ে গেলেই বনদস্যুদের হাতে মারপিট ও মুক্তিপনের দাবীতে অপহৃত হতে হয়। এটাই হচ্ছে,-বর্তমান বাস্তব অবস্থা। নিরাপত্তার অভাবে অনেক জেলে-বনজীবী এখন পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে মৎস্য আহরন।