পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত গল্প, ছড়া, কবিতা এসব নতুন কিছু নয়। প্রাক-প্রাথমিক অথবা প্রাথমিক শ্রেনী থেকেই এসব আমরা দেখে আসছি।পাঠ্যবইয়ে এসব সংযুক্ত করার বিভিন্ন যুক্তি অথবা তর্ক হতে পারে। আসলে প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা যেমনটি ছোট গল্প, ছড়া পড়ে আনন্দ পেয়েছি, কিছু শিখেছি, ঠিক মাধ্যমিক পর্যায়ের গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা থেকেও এর ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। আমাদের সুপ্ত মেধাটিকে প্রস্ফুটিত করতে যথার্থই মূল্য দিতে হবে পাঠ্যবইগুলোকে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্যবই, পাঠ্য বইয়ে সংযুক্ত রচনা, এগুলো আপাতত ঠিকঠাক আছে।
◘ এবার আসছি সমস্যাটা নিয়ে।
বিভিন্ন পরিবেশ, প্রেক্ষাপট, অভিজ্ঞতা, নিছক আনন্দ দান, কিছু শেখানো অথবা বাজারের কাটতি স্বরূপ লেখালেখি করা, এগুলোইতো লেখকদের মূল পরিচয়!
লেখক বাহ্যিক পরিবেশটাকে তার নিজস্ব ধ্যান-ধারণার সাথে যোগ-বিয়োগ করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করছেন। যে শিক্ষার্থীর মনের সাথে লেখকের লেখাটি মন ছুয়ে যাচ্ছে, সে সেটাকে পূর্ণাঙ্গভাবে ধারণ করছে, অন্য শিক্ষার্থীগন অগ্রাহ্য স্বরূপ সেটাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এমনটিই ঘটছে প্রতিনিয়ত।
লেখক যে কারনেই লিখুক না কেনো, পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করা হয় নিশ্চিত কিছু শেখানোর জন্য। হ্যা, গল্প, কবিতা পড়ে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি, শিখছি, শিখবো। কিন্তু, সেই গল্প বা কবিতার শবশ্ছেদ করার কি খুব বেশিই দরকার? শিক্ষাবিদদের কাছে জানতে চাচ্ছি।
বলাই, কমলাকান্ত, বিলাসী, হৈমন্তী, নতুনদা ইত্যাদি ইত্যাদি চরিত্র হ্যান করেছে ত্যান করেছে, বুঝলাম। কিন্তু, অনুশীলন করতে গিয়ে, বলাই কি পছন্দ করে? কমলাকান্ত গাজা খায় না আফিম খায়? বিলাসীর বিয়ের পূর্বে কার সাথে প্রেম ছিলো? হৈমন্তীর পিতার কয়খানা বিয়ে? নতুনদা কোন গ্রামের কাচা পায়খানা ভেঙে একাকার অবস্থা? ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন দ্বারা আসলে কিভাবে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞানটিকে প্রসারিত করা হচ্ছে? মেধাটিকে যাচাই বাছাই করে ভালো নম্বর দেয়া হচ্ছে? শিক্ষাবিদগন জবাব দিবেন কি?
আমাদের মেধাটুকুন লেখকদের সাহিত্যের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। যেমনটি টবের গাছগুলো অথবা বনসাই। যেগুলোকে হাত-পা কেটে প্রতিবন্ধি করে রাখা হয়, বাড়তে দেয়া হয়না।
এজন্যই হয়তোবা অধিকাংশ লেখক-সাহিত্যিকদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি অনীহা ছিলো, আছে, থাকবে। এক প্রাবন্ধিকতো বলেই ফেলেছিলেন, ‘সু-শিক্ষিত লোকমাত্রই স্ব-শিক্ষিত’। আর আমরা কয়েকটা সার্টিফিকেটের আশে, বেকার দশা দূরীকরণে, ভালোবাসার মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে, তিনবেলা ভরপেট আহার করতে লাইলী-মজনু, শিরিণ-ফরহাদ আর দেবদাসের প্রেমলীলা কপচে কপচে তিতা বানিয়ে ফেলছি।
ভাইরে, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আজ পর্যন্ত কম লেখালেখি হয়নি, কম মানুষ কম কথা বলেনি। কিন্তু, আমরা আমরাইতো। সর্বোপরি, আমাদেরকে এই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আজ একমাত্র যেই কারনে আমরা আমাদের সরকার, পিতা-মাতা, গুরুজনদের দোষী সাব্যস্থ্ করছি, আগামী প্রজন্ম ঠিক ঐ একই কারনে আমাকে, আপনাকে রাত-দিন অশ্লীল ভাষায় সম্ভাষণ করবে।
আপনার কশেরুকায় কেউ আগ্নেয় অস্ত্র ঠেকায় নি, পা বাড়ালে তপ্ত আগুনেও পুড়তে হবে না। কিন্তু, এর থেকেও বেশি যন্ত্রনা আপনায় ভোগ করতে হবে।
সিদ্ধান্ত আপনার।।
স্বত্ব ও দায় লেখকের…