মুঠোফোন বা মোবাইলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্রতারণার ঘটনা। কখনও জিনের বাদশা, লাখ টাকার গাড়ি, আবার কখনও লটারির পুরস্কার ইত্যাদি বলে মোবাইল ফোনে প্রতারণার ঘটনা বেশ পুরনো। তবে পূরনো হলেও এসব প্রলোভনে পড়ে অনেক সময়ই সর্বশান্ত হচ্ছে গ্রামের সহজ সরল সাধারণ মানুষ।
সর্বশেষ গত রোববার বাগেরহাটের মংলায় মোবাইল ফোনে লটারি জেতার নামে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে টাকা খুইয়েছেন শিশির রায় (৩৫) নামের এক যুবক। তিনি মংলার দ্বিগরাজ এলাকার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের একজন ওয়ার্কশপ শ্রমিক।
গ্রামীনফোন অফিসের পরিচয় রোববার সকালে দুটি নাম্বর ফোন আসে শিশিরের মুঠোফোনে। ফোন থেকে তাকে জানান হয় লটারি জেতার খবর।
শিশির রায় বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, রোববার গ্রমীনফোনের ০১৭৬৫-৬২০৪৮৪ এবং ০১৭৯৫-২১৪০৬৬ থেকে ফোন আসে আমার ফোনে। ফোনে গ্রামীনফোন অফিসের পরিচয় দিয়ে বলেন- গ্রামীন সব সিমের লটারী হয়েছে, তার ভিতরে আমি দ্বিতীয় পুরস্কার একটি প্রাইভেট কার পেয়েছি।
এরপর তারা আমার মন্তব্য জানতে চেয়ে বলেন, আপনি কি গাড়ী নিবেন না ক্যাশ টাকা নিবেন?
প্রতি উত্তরে আমি তাদেরকে বলি- আমি গরীব মানুষ ভাই গাড়ী দিয়ে কি করব? আমাকে গাড়ীর দাম দিয়ে দিন।
তখন তারা বলেন, ঠিক আছে স্যার আপনি এখনি এই নাম্বারে ২৫ হাজার টাকা বিক্যাশ করে দেন এবং সাথে সাথে আপনি আপনার নাম্বারে এক লাখ টাকা পেয়ে যাবেন। আমি কথা সত্যি ভেবে ২৫ হাজার টাকা বিক্যাশ করে দিই এবং তারপর থেকে নম্বরটি বন্ধ আছে।
নিজের বোকামির জন্য অনুতপ্ত শিশির রায় বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, ধারা দেনা করে এই টাকা যোগাই ছিলাম। কিন্তু এতবড় ফান্দে পড়তে হবে কখন বুঝতে পারিনি।
এব্যাপারে আইটি বিশেষজ্ঞ বায়জীদ হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, এক শ্রেনীর প্রতারক চক্র বিভিন্ন অপারেটর নম্বর থেকে সাধারণ গ্রাহকদের ফোন করে দির্ঘ্য দিন ধরে লটারী বা পুরস্কার বিজয়ী হবার কথা তাদের সাথে প্রতারণা করছে।
সাধারণত এধরনের প্রতারকা বেশ স্মার্ট। তারা খুব গুছিয়ে কথা বলে। আর এতে বেশীরভাগ সহজ সরল লোক তাদের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে।
আরেক আইটি বিশেষজ্ঞ নিয়ামুল হক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, অধিকাংশ সময়ে সঠিক ভাবে রেজিষ্টেশন করা নয় এমন সব সিম দিয়ে করা হয় এসব প্রতারণা। ফলে প্রশাসনকে বেগপেতে হয় এসব অপরাধীদের সনাক্ত করতে।
এছাড়া বর্তমানে ‘স্ক্যামিং কলের মাধ্যমে প্রতারণার নতুন এক ফাঁদের কথা জানান তিনি। তিনি বলেণ, +২৪৩ এবং +৬৯০ নম্বরের কোড সংবলিত ফোনে স্ক্যামিংয়ের ফাঁদে পড়ছেন বাংলাদেশী গ্রাহকরা। নাম্বারের পূর্বে ওই কোর্ড যুক্ত ফোন বা মিসকলে কল ব্যাক করলে কয়েক সেকেন্ডেই উধাও হয়ে যাচ্ছে মোবাইলের সবটুকু ব্যালেন্স। এছাড়াও বিভিন্ন তরুণ-তরুণীর ছবি ব্যবহার করে এই ধরনের স্ক্যামিং কলের ফাঁদ পাতা হয় বলেও জানান তিনি।
এই দুই আইটি বিশেষজ্ঞের মতে, এধরণের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে সাধারণ গ্রেহকদের স্বচেতনা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
ফোনে লটারি বা পুরস্কার জেতার কথা বলে প্রতারণার বিষয়ে গ্রামীনফোনের মংলা কাষ্টমার কেয়ারের ম্যানেজার আজিমুজ্জামান জানান, গ্রামীন অফিস থেকে ফোন আসলে অবশ্যই ১২১ থেকে কল আসবে। অন্য নাম্বার থেকে কোন কল আসলে বিভ্রান্তি দূর করতে সাথে সাথে কাষ্টমার কেয়ারের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন তিনি।