বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে লবণ অধ্যুষিত মংলা বন্দর শহরসহ আশপাশের এলাকায়। বর্তমানে মংলা পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল।
বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন মেটাতে নারী-পুরুষ, আবাল বৃদ্ধ বনিতারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কলস, জেরিক্যান, ড্রাম নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছুটাছুটি করছে।
বিশুদ্ধ খাবার পানি না পেয়ে অনেকেই বাধ্য হয়ে পান করছে দূষিত লবণ পানি। এতে করে শিশুসহ অনেক পৌরবাসীই প্রচন্ডে গরমে পেটের পীড়াসহ পানি বাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মংলা বন্দর শহরে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দীর্ঘ দিনের। বন্দর সৃষ্টির আগ থেকেই এ অঞ্চলে খাবার পানির সংকট চলে আসছে। বন্দরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শুরু হওয়ার পর থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষই তাদের সংশ্লিষ্টদের জন্য খুলনা থেকে বার্জের (নৌযান) মাধ্যমে ও পরবর্তীতে ফয়লা থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে শহরে খাবার পানি সরবরাহ করে আসছে।
এ পাইপ লাইনের পানি নতুন ও পুরাতন বন্দরে (শহর এলাকা) বসবাসকারিদের মধ্যে অর্থের বিনিময়ে সরবরাহ করা হতো। এরপর পুরাতন মংলায় (শহর) বসবাসকারি জনসাধারণের পানির প্রয়োজন মেটাতে শহরতলীর মাকরঢোন এলাকায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে একটি পানি শোধনাগার ও সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প থেকে প্রথম দফায় পৌরসভার ২৫ কিলোমিটার এলাকায় সরবরাহ লাইন স্থাপন করে দু’হাজার পরিবারের মধ্যে পানি সরবরাহ করার কথা। শর্তানুসারে ওই দু’হাজার সংযোগ গ্রহীতা নিরবিচ্ছিন্ন পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত ১২শ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যেও পৌরসভার ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডসহ শহরতলীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা চাহিদামত পানি পাচ্ছে না। পানি সরবরাহের পাইপ লাইনে পানির গতি এতই কম যে, মাটির লেভেলে ট্যাপ থেকে ৪০ মিনিটে ২০ লিটারের দু’বালতি পানিও পাওয়া যাচ্ছে না।
অপরদিকে দেশের অনেক পৌরসভার চেয়ে এখানে পৌরবাসীকে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা পানির বিল গুনতে হচ্ছে। এখানে সকালে ১ ঘন্টা ও বিকেলে আধা ঘন্টা করে পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বিনিময়ে শহরতলীর আবাসিক গ্রাহকদের মাসিক ১ ইঞ্চি পাইপে ৪ শ’ টাকা, পৌনে ১ ইঞ্চি পাইপে ৩ শ’ টাকা ও আধা ইঞ্চি পাইপে ২ শ’ টাকা করে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া মুল শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের আরো বেশী করে মাসিক পানির বিল গুনতে হচ্ছে। দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে এখানে অতিরিক্ত পানির বিল পরিশোধ করার কারণে পৌরবাসি রীতিমতো ক্ষুব্ধ।
এদিকে বিশুদ্ধ খাবার পানি না পেয়ে অনেকেই বাধ্য হয়ে দূষিত লবণ পানি পান করছে। এতে করে শিশুসহ অনেক পৌরবাসীই প্রচন্ডে গরমে পেটের পীড়াসহ পানি বাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কলসানটেন্ট (শিশু) ডা. তরুন কান্তি দাশ বাগেরহাট ইনফোকে জানান, অত্যাধিক গরম আর বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবের কারনে প্রায় প্রতিদিরই মিশুসহ বিভিন্ন রোগী পানি বাহিত রোগে আকান্ত সহয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসে ভিড় জমাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের রিজারভার সিডিউলের শর্ত মোতাবেক খনন করা হয়নি। গভীর করা হয়েছে মাত্র অর্ধেক। ফলে রিজারভারে এখনই সরবরাহের পানি সংকট দেখা দিয়েছে। সরবরাহ লাইনে নিম্নমানের পাইপ ও যন্ত্রাংশ ব্যবহার করায় দিন দিন পাইপ ফাঁটাসহ নানা রকম ত্রুটি দেখা দেয়ায় প্রায় প্রতিদিনই পানি সরবরাহে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ গ্রাহক। প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকেই পৌরসভা জেনারেটর, পাম্প, গেট বাল্ব, মোটর ও ডেসার মেশিন কিনে নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে।
অপরদিকে, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে এর আগে সরবরাহ করা পানিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে পুরাতন মংলার (শহর) প্রায় লাধিক জনসাধারণ দারুনভাবে পানির কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। অর্থের বিনিময়েও কোথাও খাবার পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মংলার সহকারি প্রকৌশলী মোঃ কায়েস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, পাইপ লাইনে নিম্নমানের পাইপ ব্যবহারের বিষয়টি সত্য নয় এবং রিজারভার যতটুকু খনন করা হয়েছে সেই পরিমাণই বিল ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হয়েছে।
পৌরবাসীর পানি সংকট নিয়ে পৌর মেয়র মোঃ জুলফিকার আলী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সরবরাহ লাইনে মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দেয়ায় পৌরবাসীর নিরবিচ্ছিন্ন পানি পেতে সমস্যা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আগের প্রকল্পের মত আরো একটি পানির প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। এটি সমাপ্ত হলে পৌরবাসীর পানির সমস্যা থাকবে না।