বাগেরহাট জেলা কারাগারে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে সরকারি উন্নতমানের খাবার খাওয়ার পর কয়েদি অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
বুধবার দুপুর থেকে পৃথক দুটি তদন্ত দল জেলা কারাগারে পৌঁছে কাজ শুরু করে।
এদিকে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় জেলা কারাগারের অসুস্থ বন্দীর সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ২২৫ জনে। এদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ ১০০ বন্দীর শরীরে ডায়রিয়ার স্যালাইন পুশ ও ১২৫ জনকে খাবার স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে।
বুধবারও কারা অভ্যান্তরে অসুস্থ বন্দীদের চিকিৎসা সেবা দিতে কাজ করেছে ৪ সদস্যের মেডিকেল টীম।
অপরদিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ ২০বন্দীকে চিকিৎসা সেবা শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: বিদ্যুৎ কান্তি পাল আমাদের প্রতিবেদককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও জেলা বেসরকারি কারা পরিদর্শন কমিটির সভাপতি মু. শুকুর আলী জানান, বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল দুপুর থেকে কাজ শুরু করেছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
অপর তদন্ত কমিটির প্রধান বাগেরহাট জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) মো. আমানুল্লাহ বলেন, বন্দিদের চিকিৎসার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী সরকারি চিকিৎসক নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল বন্দিদের অসুস্থ হওয়ারর কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে।
“পহেলা বৈশাখে যারা রান্নার কাজে এবং খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে ছিল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
“আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই তদন্ত দল কারা পুলিশের খুলনা বিভাগীয় উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) এ কে এম ফজলুল হকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।”
এদিকে, জেল সুপার মো. আমানুল্লাহকে প্রধান করে কারাগারের জেলার মো: বদরুদ্দোজা ও কারাগারের চিকিৎসক ডাঃ নজরুল ইসলামকে নিয়ে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন একাধিক বন্দীদের স্বজনরা। তাদের দাবী ‘যাদের দায়িত্ব অবহেলায় এরুপ একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে তাদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়’।
প্রসঙ্গতঃ বাগেরহাট কারাগারের ব্যবস্থাপনা দুর্বল হওয়ায় অনৈতিক অর্থের মোহে পড়ে কারাকতৃপক্ষ অনিয়ম-দূনীর্তিতে জজরিত করে রেখেছে বলে জানিয়েছেন একাধিক মুক্তি পাওয়া কারাবন্দি। সোমবার রাতে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাগেরহাট জেলা কারাগারে ৫২৯ জন বন্দীকে সরকারি ভাবে কথিত উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করার পর পেটের পীড়া ও ডায়রিয়াসহ নানা উপস্বর্গ দেখা দেয় বন্দিদের। এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে অসুস্থ বন্দীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
বুধবার বিকেল পযর্ন্ত অসুস্থ বন্দীর সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ২২৫ জনে।
বাগেরহাট ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: বিদ্যুৎ কান্তি পাল জানান, বাগেরহাট জেলা কারাগারে পোলাও ও গরুর গোশ খেয়ে বিষক্রিয়ায় বন্দীরা অসুস্থ্য পড়ে। বন্দীদের উন্নত চিকিৎসা দিতে গত দু’দিন ধরে দুটি মেডিকেল টীম বাগেরহাট সদর হাসপাতাল ও কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি জানান, বাগেরহাট সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: মোশারেফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টীম কারা অভ্যন্তরে অসুস্থ বন্দীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছে।